সবুজদ্বীপের ডায়েরি (আন্দামান পর্ব-৫) | Sobujdweeper Diary Ep#5

"সবুজদ্বীপের ডায়েরি"    ।      আন্দামান পর্ব-৫

সবুজদ্বীপের ডায়েরি । 26th February 2020 । রাত ১১টা ........


এক ঘন্টার অসামান্য অভিজ্ঞতা নিয়ে পা রাখলাম Jolly Buoy দ্বীপে। সাদা বালির দ্বীপের জল আকাশ-নীল, মোহাবিষ্ট করে দেওয়া নীল পেরিয়ে একটু দূরে কচি সবুজের জলরাশি। রংয়ের বিভাজন তাক লাগিয়ে দেবার মতো - তাকিয়ে থাকলেই আরাম, দূর চোখের যে কোন ব্যারাম। 

দ্বীপে একজন মাত্র বিক্রেতা আসেন নির্দিষ্ট কিছু শশা আর পাতিলেবুর শরবত নিয়ে, পরিমানে তা প্রয়োজনের তুলনায় অতি নগণ্য, তাই তার দাম ও বিক্রেতার ব্যবহার - দুটোই চড়া। নৌকা-যাত্রীরা ঝাঁপিয়ে পড়লাম শশার আশায় - ওই মুহুর্তে Coral-এর চেয়েও অপ্রতুল মহার্ঘ্যটি যারা পেলেন তারা সত্যিই ভাগ্যবান। কুন্ডু স্পেশালের ম্যানেজার আগেই এই বিষয়টি সম্পর্কে আমাদের সতর্ক করেছিলেন, তাই দ্বীপে নেমেই স্বপ্না ও তৃপ্তিবৌদি যে দৌড়টা লাগাল, তা আশপাশের দ্বীপযাত্রীদের তাজ্জব করার জন্যে যথেষ্ট - কেউ কেউ দৌড়ের কারণ খুঁজতে আরো জোরে ছুট লাগালেন, নির্ভেজাল অনুসরণ। অর্ধাঙ্গিনীর শশা-প্রাপ্তির আনন্দে আমি আর অরুণদাও খুব আবেগপ্রবণ হয়ে পড়লাম। National Games-এ পদক-প্রাপ্তির চেয়েও এ যেন বেশি সম্মানীয় মনে হলো। অরুণদা এমনিতেই মানুষটা বড়ো ভাল - শশার রসানুভূতিতে চোখটা চিকচিক করে উঠল, আমার চোখ এড়ালো না। 

ছবি তুললাম যথেচ্ছ - চারিদিকে সুসজ্জিত দ্বীপরাজি - গভীর নীল স্বচ্ছ জল - পরিষ্কার আকাশ। ক্যামেরায় shutter on করলেই হলো, বাকিটা প্রকৃতির নিজের হাতে, আলো আর রঙের ঐশ্বর্য নিয়ে আমাদের পাগলপারা মনের ক্যামেরায় ধরা দিতে প্রস্তুত।

'জলি-বয়' দ্বীপের সমুদ্রসৈকত বরাবর হাঁটলে ভৌগোলিক নিয়মে দ্বীপের একই জায়গায় ফিরে আসা যায়। যেহেতু এই দ্বীপের Architect স্বয়ং স্রষ্টা, তাই প্রকৃতির পুঁজিকৃত ধনরাশি ইতস্ততঃ ছড়িয়ে রয়েছে দ্বীপের স্থলভাগে। তা' কখনও রঙিন পাথর, মৃত কোরাল, মাটির রঙের টিলার অপূর্ব landscape, যার গা ঘেঁষে মধ্য-বয়স্ক গাছের নানা-আকারের চিত্রকল্প, নাম না জানা রং-বেরঙের ফুল - আর এই সবার ওপর দিয়ে ঢেউ খেলে যাওয়া নির্মল হাওয়া - মনুষ্য ইন্দ্রিয়ের যাবতীয় অনুভূতিকে ঐন্দ্রজালিক সম্মোহনে বিবশ করে দেওয়ার জন্যে যথেষ্ট।

কিন্তু এ ঘোর যে বড়ো অল্প সময়ের - ১ ঘন্টা পরেই ডাক এলো ফিরে যাবার, আমাদের সময় শেষ। মনকে এই সবুজ দ্বীপের রাজার কাছে গচ্ছিত রেখে ভেজা শরীর নিয়ে উঠলাম জলযানে - ধরা দিলাম নিয়মতত্ত্বের শৃঙ্খলে। 

ডাক্তার চৌধুরী মানুষটি ভারী মজার। বললেন, 'জানেন তপনবাবু ! এমন একটি দ্বীপেই বিবাহিত পুরুষ-মানুষের জীবন নির্বাসিত হওয়া উচিত। স্ত্রীর সমস্ত চাহিদা বেশ ওই শশা আর লেবুর জলে সীমাবদ্ধ থাকবে - এ কথা ভাবলেই বুকের ভেতরটা কেমন ডুকরে ওঠে ! শুধু আমার ডাক্তারি profession নিয়েই যা চিন্তা। এখানে রুগী নেই যে !

স্বপ্নার বরাবরই কেনাকাটা বা শপিং-এর ঝোঁক, তার সঙ্গে এবার তৃপ্তিবৌদি দোসর। এই তৃপ্তিতেই স্বপ্না যথারীতি সন্ধেবেলা ছুটল কাছের মার্কেটে - আমি পিছু নিলাম ক্রেডিট কার্ড পকেটে নিয়ে। এই একটা কাজে আমি আনন্দ ও বেদনা - দু'ই সমানভাবে অনুভব করি। সঙ্গী হলেন সোমনাথদা ও বৌদি - ওনারাও ভারী চমৎকার এক পরিবার - এই ক'দিনে আমরা পরস্পরের কাছাকাছিও হয়ে পড়েছি, তাই হয়ত সোমনাথদা বললেন, আপনারা যেখানেই যাবেন, আমাদের দুজনকে বাদ দেবেন না, আমরা সঙ্গে যাব। 


আজ এইটুকু থাক - আগামীকাল কেনাকাটা ও অন্যান্য গল্প।       






চলবে......
আন্দামান ভ্রমণের প্রথম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক করুন
আন্দামান পর্ব-৬ পড়তে এখানে ক্লিক করুন
©tapanbasu
all image clicks : tapanbasu(author)

Comments

Popular posts from this blog

তপনের ডায়েরি ৭ / ৩১ আগস্ট ২০২১

তপনের ডায়েরি ৫ / ৫ আগস্ট ২০২১

স্টেরয়েড ছোট গল্প রচনা : তপন বসু