সবুজদ্বীপের ডায়েরি (আন্দামান পর্ব-৩) | Sobujdweeper Diary Ep#3
"সবুজদ্বীপের ডায়েরি"
(আন্দামান পর্ব-৩)
রাধানগর বিচ সত্যিই মোহন-সুন্দর। সবুজ বনরাজির হাত ধরে ঝুরঝুরে সাদা বালির পাড় বাঁদিক থেকে ডানদিকে অষ্টাদশী চাঁদের মতো মিষ্টি বাঁক নিয়ে বিচকে আরো মোহিনী রূপ দিয়েছে। তার গায়ে রঙিন জলের স্পর্শ - কোথাও স্বচ্ছ নীল, কোথাও হালকা সবুজ। সাগরজলের ঢেউতেও মন-ভেজানো মুক্তোদানা - বেসামাল হবার ভয় নেই - শরীর জুড়িয়ে দেওয়া আলতো পরশ। আজ রোদের তেজটাও খুব বেশি নয়। সাধারণত আন্দামান বেড়াবার শ্রেষ্ঠ সময় হলো অক্টোবর থেকে মে মাস। তবু আমার মনে হয় প্রথম ও শেষ শীত হলো আন্দামান ঘোরার সবচেয়ে উত্তম সময়। বাস একটা পার্কিং লট-এ দাঁড়াল। আমরা এগিয়ে চললাম পৃথিবীর অন্যতম সেরা বিচের দিকে। প্রবেশ পথেই দিকনির্ণয় করা রয়েছে কোনদিকে চেঞ্জিং রুম, কোথায় টয়লেট। সমুদ্রস্নান সেরে ভেজা জামাকাপড় পরিবর্তন, বালি ঝেড়ে ফেলার স্নান ইত্যাদি সেরে নেবার উৎকৃষ্ট ব্যবস্থা - অবশ্যই যৎসামান্য মূল্যের বিনিময়ে। এখানেই একটি বাঙালি পরিবার - ওপার বাংলার - কে কতবার কি কি করছে, তার হিসেব রাখছে আর খাজনা আদায় করছে। এও এক পেশা দেখলাম - সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত মানুষের নিত্যকৃত্যের হিসেব রেখে চলেছে। রাধানগর বিচ থেকে বেরোবার সময়ও তার গলা পেলাম -'বাবু, আপনার শুধু স্নান, দশ টাকা দিয়ে যান'।
দুপুরের খাবার শ্রীহরি হোটেলে বেশ জমিয়ে সম্পন্ন হলো। সকলে যে যার মতো একটু কেনাকাটা সেরে নিলাম বিচের লাগোয়া ছোট ছোট স্টল থেকে, আর ডাব খেলাম। যেমন শাঁসালো তার চেহারা, তেমনই সুস্বাদু মিষ্টি জল। নানারকম সুখের পসরা নিয়ে হোটেলে ফেরের জন্যে বসে উঠলাম - আবার জেটি - তারপর cruize-এ পোর্ট ব্লেয়ার।
একটা কথা বলে রাখা খুব জরুরি। রাধানগর বিচের সানসেট কিন্তু দেখবার মতো। যারা কোন ট্রাভেল এজেন্টের সঙ্গে না এসে নিজেরাই ট্যুর প্ল্যান করবেন, তারা অবশ্যই একটা রাত রাধানগর বিচের ওপর টেন্ট-এ কাটাবেন। এ যাত্রায় আমাদের ইচ্ছে থাকলেও সেটা সম্ভব হলো না।
এই বিচের বিশেষত্ব হলো এর জলের রঙ। আর এর বিচের ঠিক সামনে স্বাভাবিক ভাবে বেড়ে ওঠা বড়ো বড়ো গাছপালার আলো-আঁধারি মায়ার পরিবেশ। আপনার ইচ্ছে করবেই একটু বসতে। কোথায় বসবেন ? কি সুন্দর করে গাছের লগ কেটে বসবার জায়গা তৈরী করে রাখা আছে। একটা ছোট্ট ছাউনি দেওয়া কাঠের গোলাকৃতি ঘর। বিশ্রাম, আরাম আর ছবি তোলবার উপযুক্ত ফ্রেম।
'সবুজদ্বীপের ডায়েরি' প্রথম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক করুন।
©tapanbasu
all image clicks : tapanbasu(author)
Comments
Post a Comment