সবুজদ্বীপের ডায়েরি (আন্দামান পর্ব-২) | Sabujdweeper Diary Ep#2

"সবুজদ্বীপের ডায়েরি" 
(আন্দামান পর্ব-২)

সেলুলার জেল রাতের অন্ধকারে

সবুজদ্বীপের ডায়েরি । 25th February 2020 ।  ভোর ৫টা ........

ঘুমটা আপনা থেকেই ভেঙে গেল - ঘড়িতে দেখলাম ভোর পাঁচটা। স্বপ্নে দেখেছি ক্ষুদিরাম বসুকে - কয়েদীর পোশাকে "বন্দে মাতরম" মন্ত্র উচ্চারণ করতে করতে ফাঁসির মঞ্চের দিকে এগিয়ে যেতে। তিনি আমার বসুপরিবারের স্বগোত্রীয় বলে কিনা জানি না, সারা রাত মনের মধ্যে একটা চাপ অনুভব করেছি। তাই হয়তো আপনা হতেই ঘুমটা ভেঙে গেল। ঠিক পাঁচটা বেজে কুড়ি মিনিটে সূর্য মুখ তুলে চাইলেন। প্রথম আলোর স্নানে অনেকটা হালকা মনে হলো। ট্রাভেল এজেন্টের নিয়মাবলীর প্রথম নির্ঘণ্টতে প্রতিদিনের সূর্যোদয় চাক্ষুষ করাটা আমাদের প্রাথমিক ভ্রমণ সূচি - খারাপ লাগছে না। নিজের আপাতত 'বেলায় ঘুম থেকে ওঠার' বদ-অভ্যাসের সাময়িক অবলুপ্তিতে মানসিকভাবে নিজেকে অনেক সতেজ লাগছে। ডায়েরি লেখা এখনকার মতো বন্ধ করলাম। পৌনে সাতটার মধ্যে বেরিয়ে পড়তে হবে। হ্যাভলক আইল্যান্ডের উদ্দেশে। সারাদিনের দ্বীপ পর্যটন। 
👓
25th February 2020 ।  রাত ১১টা ........
ভেবেছিলাম আজ আর ডায়েরি লিখব না। কিন্তু কিছুটা নেশা আর কিছুটা ভালবাসা - কলম নিয়ে বসলাম। আমরা কুন্ডু স্পেশালের বিয়াল্লিশ জন পর্যটক রওনা হলাম বাসে চড়ে Huddoo Jetty-র উদ্দেশে। হোটেল থেকে মোটামুটি ১১ কিমি দূরে এই জেটি - সেখান থেকেই Cruize ছাড়বে Havelock-এর দিকে। এর মধ্যে কয়েকটি ফ্যামিলির সঙ্গে বেশ ঘনিষ্ঠতা গড়ে উঠেছে। আমাদের পাশের রুম-এই রয়েছেন চৌধুরীদা ও বৌদি। চৌধুরীদা পেশায় ডাক্তার, বেশ রসিক মানুষ। তাঁর রসমাধুরীর আকর্ষণ আর পেশার প্রতি স্বাভাবিক সম্ভ্রম - এই দুয়ের মিলনে চৌধুরী পরিবারে মিশে গেলাম আমি ও অরুণদা সপরিবার। সম্ভবতঃ অরুণদার প্রাণখোলা সশব্দ হাসির মহিমা চৌধুরীদাকেও আকৃষ্ট করেছিল। তাই ওনার ডাক্তারি প্রেসক্রিপশন লেখার নিয়মিত অভ্যাসকে সহজেই দূরে ঠেলে উজাড় করে দিলেন হাস্যরসের অমনিবাস। এদিকে আমাদের বাস যে কখন হোটেল থেকে জেটিঘাটে পৌঁছে গেছে টেরই পেলাম না। ম্যানেজার রঞ্জিত আগেই বলে রেখেছিল Havelock দ্বীপের সেরা আকর্ষণ রাধানগর বিচ। এখানে যাদের ইচ্ছে হবে, সমুদ্রস্নানের আনন্দ উপভোগ করতে পারবেন। লক্ষ করলাম - অধিকাংশই একেবারে স্নানের পোশাকে প্রস্তুত হয়েই বেরিয়েছেন। পুরুষদের কারোর ট্রাউজারই হাঁটু পেরোয় নি। আর যাদের এমনিতেই হাঁটুর সমস্যা, তাদের পোশাকের আড়ালেই রয়ে গেল রাধানগরের সমুদ্রস্নান - ওঁরা শ্যামনগর কিংবা বরানগরেই সেটা সেরে নেওয়া শ্রেয় মনে করলেন হয়তো। 

ওমা ! একী !
সত্যিই দেখি রাধানগর বিচের আগেই শ্যামনগর বলে একটি জায়গা রয়েছে।  শ্যাম ও রাধা এখানেও পাশাপাশি। ঠিক যেভাবে আমাদের দলে সদ্য বিবাহিত এক দম্পতি - বাহুপাশে বন্দি হয়েই তাদের চলতে ফিরতে দেখছি। বিবাহিত জীবনের ঠিক এই মুহূর্তটায় প্রত্যেক পরিষেবা পঞ্চাশ শতাংশ ডিসকাউন্টে দেওয়া উচিত - জীবনের এই কয়েক বছরের 'ফেভিকল অধ্যায়'কে বা অটুট জোড়কে সম্মান জানানোর জন্যে, কারণ সে সুযোগ পরে আর নাও আসতে পারে। জানি না কুন্ডু সে পথে হেঁটেছে কিনা।  

প্রায় দেড় ঘন্টার পথ Huddoo যেটি থেকে Havelock - সেখান থেকে
বন্ধু-প্রতিবেশী অরুণদার সঙ্গে লেখক
বাসে আরো মিনিট চল্লিশের পথ রাধানগর বিচ। এ যাত্রাতেও চৌধুরীদার কৌতুক-কলা যাত্রাপথের আনন্দকে দ্বিগুণ বাড়িয়ে তুলল। ভদ্রলোক মিষ্টভাষী - সেটা বোধ হয় জানেন বলেই জনসমক্ষে জানান দিতে ক্লান্তি নেই। উনি ঠায় বলে চললেন আর আমরা মেধাবী শ্রোতা হবার পরীক্ষায় ক্রমশঃ উত্তীর্ণ হতে থাকলাম। ম্যানেজার বলে গেলেন - 'এখানেই আমাদের দুপুরের খাওয়া। আপনারা স্নান ও পর্যটন সেরে শ্রীহরি হোটেলে চলে আসবেন - ওখানেই দ্বিপ্রাহরিক ভোজন সেরে ফেরার পথ ধরব'। সেই বাঙালি হোটেল ও বাংলার খাবার। আন্দামানে লক্ষ করছি বাঙালিরাই সংখ্যাগরিষ্ঠ - তা এপার বা ওপার - যে পারেরই হোক। তাদের পরিবারসহ সকলেই ভিটের টান ছেড়ে সাগরপারের টানে দূরদ্বীপবাসিনী। 

রাধানগর বিচ সত্যিই অপূর্ব, দেখবার মতো। কিন্তু তার রূপের বর্ণনা করতে গেলে সময় লাগবে। এখন প্রায় মধ্যরাত - তাই আজ নয়, এ গল্প কাল বরং লিখব। আপনারাও একটু অপেক্ষা করুন পরের পর্ব অবধি - এই অপূর্ব নৈসর্গিক শোভার বিস্তারিত বিবরণ সেদিন বলব। 
শুভরাত্রি। 
©tapanbasu
all image clicks : tapanbasu(author)
'সবুজদ্বীপের ডায়েরি' প্রথম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক করুন। 

Comments

Popular posts from this blog

তপনের ডায়েরি ৭ / ৩১ আগস্ট ২০২১

তপনের ডায়েরি ৫ / ৫ আগস্ট ২০২১

স্টেরয়েড ছোট গল্প রচনা : তপন বসু