বড়ো বিস্ময় জাগে (পর্ব-১৪) | Baro Bismay Jage Ep#14
বড়ো বিস্ময় জাগে
পর্ব-১৪
'বড়ো বিস্ময় জাগে'র পরের পর্ব (১৫) পড়তে চাইলে এখানে ক্লিক করুন।
'বড়ো বিস্ময় জাগে'র ১ম পর্ব পড়তে চাইলে এখানে ক্লিক করুন।
©tapan basu. all rights reserved.
Image Courtesy >(1)harvardquarelibrary (2)facebook (3-4)newyorktimes-parisbureau
পর্ব-১৪
কবিকে নিয়ে যখন বাঙলার বাইরে বেরিয়েছি নানা বর্ণময় ঘটনাবলীর মধ্যে দিয়ে, তখন আরেকটু ঘুরে আসি তাঁর গরিমার আরো কিছু গল্প নিয়ে।
১৯২০তে অত্যধিক গরম পড়ল। ফলে চৈত্র, বৈশাখ, জ্যৈষ্ঠ - এই তিন মাস বিশ্বভারতী ছুটি দিতে হলো। এই সময়ে মহাত্মা গান্ধী আমন্ত্রণ করলেন কবিগুরুকে - গুজরাটি সাহিত্য-সম্মেলনে তাঁকে সভাপতি হতে হবে। কবি আহমেদাবাদ রওনা হলেন মার্চ'এর শেষদিকে। অতিথি হলেন আহমেদাবাদের বিখ্যাত ধনী ও অত্যন্ত শিক্ষিত পরিবারের - ক্যালিকো মিলের মালিক অম্বালাল সারাভাইয়ের - যাঁদের গল্প আগের পর্বে করেছি। বলাই বাহুল্য, গুজরাটে কবির ইংরেজীতে বক্তৃতা অভূতপূর্ব সাড়া ফেলেছিল উপস্থিত শ্রোতাদের মধ্যে।
এই গুজরাট সফরের ঠিক আগে ৫ই মার্চ কবি দোলপূর্ণিমায় তৈরী করলেন একটি গান "মাধবী হঠাৎ কোথা হতে"। অনেক তথ্য ঘেঁটে খেয়াল করলাম, এর পর প্রায় এক বছর আমরা কোনো গান পাইনি কবির কাছে। ১৯২১-এর আগস্টে আবার হু-হু করে বর্ষার ধারার মত নেমে আসে তাঁর বর্ষার গান, বর্ষামঙ্গলের জন্যে। এও এক বিস্ময়। হয়তো তিনি দীর্ঘ বিদেশ ভ্রমণে রসদ সংগ্রহে ব্যাপৃত ছিলেন !
গুজরাট থেকে ফিরেই কিছুদিনের মধ্যে কবি চললেন বিলেত - আবার য়ুরোপ সফরে। প্রথম বিশ্বযুদ্ধ সবে শেষ হয়েছে, দু'বছরও কাটে নি। কবি ভাবছেন, কত পুরোনো ও নতুন বন্ধুর সঙ্গে দেখা হবে। তিনি লন্ডনে পৌঁছোবার পর রোদেনস্টাইন সহ বেশ কিছু পুরোনো বন্ধুরা এলেন, কিন্তু তাঁদের মধ্যে আন্তরিকতার স্পর্শ নেই। কবি বুঝলেন, তিনি গত বছর জালিয়ানাবাগের হত্যাকাণ্ডের
প্রতিবাদে সম্রাট-প্রদত্ত 'নাইট' উপাধি ত্যাগ করতে চেয়ে যে চিঠি দিয়েছিলেন, এ তারই প্রতিফলন। রবীন্দ্রনাথ খুবই উদ্বেগ নিয়ে তৎকালীন ভাইসরয়কে লিখেছিলেন, "the time has come when badges of honour make our shame glaring in their incongruous context of humiliation, and I for my part wish to stand, shorn of all special distinctions, by the side of those of my countrymen, who, for their so-called insignificance, are liable to suffer a degradation not fit for a human being”. এমন একটি প্রতিবাদের ভাষা নাড়িয়ে দিয়েছিল সারা ভারত তথা বিশ্ববাসীকে। আমার বিস্ময় এই যে, এতো কিছু সত্ত্বেও লন্ডনে কবির সাথে রোদেনস্টাইন ছাড়াও আরো দেখা করতে এলেন আইরিশ কর্মবীর স্যার হোরেস প্লাঙ্কেট, রুশ চিত্রশিল্পী নিকোলাস রোএরিখ। এর সঙ্গে আরো বহু পরিচিত-অপরিচিত ব্রিটিশ স্বনামধন্য নাগরিক। তাঁর বিলেত সফরের সেক্রেটারি নিযুক্ত হলেন পিয়ার্সন। আমার দৃঢ় বিশ্বাস, ওই পরিস্থিতিতে অন্য কারোর ক্ষেত্র হলে হয়তো এই আবেগ উপস্থিত থাকা অসম্ভব হত।
ইংলন্ড ছেড়ে কবি চললেন ফ্রান্স। প্যারিস অপরিচিত, ফ্রান্সের ভাষা অজ্ঞাত। সহায় হলেন সুধীর রুদ্র, তিনি প্যারিসে পড়াশুনো শেষ করতে এসেছেন; আর পেলেন শিল্পী আঁদ্রে কার্পেলেসকে। এঁদের কেউই ভবঘুরে বা কর্মহীন নন যে এতটা দীর্ঘ সময় তাঁরা অবলীলায় কবিকে দিতে পারেন। অবাক হতে হয় এখানেই যে তাঁর সঙ্গে থাকতে পারাটাই যেন মহাপ্রাপ্তি - এই বোধের উদ্রেক ঘটাটাই আসলে উচ্চশিক্ষার প্রভাব-ফসল। নিজ-জ্ঞানকে জ্ঞানীর সংস্পর্শে আরো শুদ্ধ করতে চাওয়াটাও একপ্রকার দূরদর্শিতা। কবির সঙ্গে দেখা করতে এলেন ফ্রান্সের বহু প্রখ্যাত মনীষী। যাঁদের মধ্যে ছিলেন বিখ্যাত দার্শনিক আঁরি বের্গস, লে ব্রূন, সিলভ্যা লেভি, কোন্তেস দ্য নোআই প্রমুখ। এই বের্গস'র কথা রবীন্দ্রনাথ বহু গল্প-উপন্যাসে লিখেছেন। ছোট-গল্প 'পয়লা নম্বর'-এও রয়েছে তার উল্লেখ। আমার বলতে খুব ভালো লাগছে, আমার নিজস্ব মিউজিক কোম্পানি থেকে এই ছোট-গল্পটি সিডি আকারে প্রকাশ পেয়েছে। নিচে লিংকটা দেওয়া রইল, ইচ্ছে বা সময় হলে শুনে দেখতে পারেন - একটা ছোট্ট গল্প এবং তার সঙ্গে উচ্চমানের গল্পপাঠ পাঠক-শ্রোতাকে কেমন করে আশপাশের জগৎ থেকে নিমেষে পরিযায়ী করে তুলতে পারে। পরে এই বের্গস'র সঙ্গে আলাপচারিতায় জানা গেল, এই দার্শনিক রবীন্দ্রনাথ সম্পর্কে অনেক খবরই রাখেন। এও এক আশ্চর্য ! ৬০ বছর বয়সী রবীন্দ্রনাথের খ্যাতির ব্যাপ্তি কোন উচ্চতায় গিয়ে পৌঁছেছিল যে তিনি যে দেশেই যান না কেন, তাঁর গুণগ্রাহীর সংখ্যা এরকম আশাতীত। ফ্রান্সে থাকাকালীনই আমন্ত্রণ এলো নেদারল্যান্ড থেকে - সেখানে বক্তৃতা দিতে হবে। কতগুলো জায়গায় বক্তৃতা হলো জানেন? আমস্টার্ডাম, হেগ, লাইডেন, ইউট্ৰেক্ট, রোটর্ডম। তৎকালীন এক ডাচ ভদ্রলোক লিখছেন, 'কবি যখন হল্যান্ডে এলেন, শ্রোতাদের মধ্যে এমন একজনও ছিলেন না যিনি রবীন্দ্রসাহিত্য সম্পর্কে সম্পূর্ণ অজ্ঞ। সে দেশে ওই সময় "Spirit of Tagore" বলে একটা কথাই চালু হয়ে গিয়েছিল - এতটাই ছিল তাঁকে ঘিরে অবর্ণনীয় উন্মাদনা। বিস্ময় নয়?
এই বিলেত যাত্রা নিয়ে কবির নিজের অনুভূতির কথা বলব পরের পর্বে। সেটি তাঁর প্রথম বিলেত যাত্রা। বেশ মজার অভিজ্ঞতা। আজ তোলা রইল।
১৯২০ - কবিগুরু ও গান্ধীজি |
এই গুজরাট সফরের ঠিক আগে ৫ই মার্চ কবি দোলপূর্ণিমায় তৈরী করলেন একটি গান "মাধবী হঠাৎ কোথা হতে"। অনেক তথ্য ঘেঁটে খেয়াল করলাম, এর পর প্রায় এক বছর আমরা কোনো গান পাইনি কবির কাছে। ১৯২১-এর আগস্টে আবার হু-হু করে বর্ষার ধারার মত নেমে আসে তাঁর বর্ষার গান, বর্ষামঙ্গলের জন্যে। এও এক বিস্ময়। হয়তো তিনি দীর্ঘ বিদেশ ভ্রমণে রসদ সংগ্রহে ব্যাপৃত ছিলেন !
গুজরাট থেকে ফিরেই কিছুদিনের মধ্যে কবি চললেন বিলেত - আবার য়ুরোপ সফরে। প্রথম বিশ্বযুদ্ধ সবে শেষ হয়েছে, দু'বছরও কাটে নি। কবি ভাবছেন, কত পুরোনো ও নতুন বন্ধুর সঙ্গে দেখা হবে। তিনি লন্ডনে পৌঁছোবার পর রোদেনস্টাইন সহ বেশ কিছু পুরোনো বন্ধুরা এলেন, কিন্তু তাঁদের মধ্যে আন্তরিকতার স্পর্শ নেই। কবি বুঝলেন, তিনি গত বছর জালিয়ানাবাগের হত্যাকাণ্ডের
১৯১৯ - নাইট উপাধি পরিত্যাগের পরে |
প্যারিসে রবীন্দ্রনাথ |
প্যারিসে |
এই বিলেত যাত্রা নিয়ে কবির নিজের অনুভূতির কথা বলব পরের পর্বে। সেটি তাঁর প্রথম বিলেত যাত্রা। বেশ মজার অভিজ্ঞতা। আজ তোলা রইল।
ছোট গল্প "পয়লা নম্বর"
'বড়ো বিস্ময় জাগে'/তপন বসু/পৃষ্ঠা-১৪/চলবে ..........
'বড়ো বিস্ময় জাগে'র পরের পর্ব (১৫) পড়তে চাইলে এখানে ক্লিক করুন।
'বড়ো বিস্ময় জাগে'র ১ম পর্ব পড়তে চাইলে এখানে ক্লিক করুন।
©tapan basu. all rights reserved.
Image Courtesy >(1)harvardquarelibrary (2)facebook (3-4)newyorktimes-parisbureau
Comments
Post a Comment