একটু ভেবে দেখুন-২ : পাগল | Ektu Bhebe Dekhun Ep#2
একটু ভেবে দেখুন - ২ | তপন বসুর 'কলমে'
আজ : 'পাগল'
পথে-ঘাটে এমন অনেক মহিলা-পুরুষকে দেখা যায়, যারা আপনমনে বকবক করতে করতে রাস্তা দিয়ে চলেছে। কখনও কাউকে হাতের কাছে পেয়ে দু-চারটি আপত্তিকর মন্তব্যও উপহার দিচ্ছে। আমরা এদের 'পাগল' বলি। পাগলে কিই না বলে !
আমরা কি পারি না আমাদের বাসস্থানের চৌহদ্দির মধ্যে বা তার কাছেপিঠে অবহেলিত এমন ছোট বয়েসের শিশু বা কিশোর-কিশোরীদের একটু মানসিক সাহায্য দিয়ে তাদের অনাহূত অসুস্থতার দিকে চলে যাওয়া থেকে বাঁচাতে? হয়তো তাতে অনেককে অপরাধপ্রবণতা থেকেও দূরে সরিয়ে রাখতে পারব। এতে তো আমাদের সমাজটাই বাঁচবে। ভবিষ্যত আরো সুন্দর হবে। আমরা green city দেখতে চেয়ে কত কিই তো করছি প্রতিনিয়ত ! বাচ্চা থেকে বুড়ো - প্রত্যেক মানুষের একটা নিজস্ব 'স্পেস' দরকার। ছোটদের জন্যে খেলার মাঠ ও তাদের সেই মাঠে নিজের মত করে ছেড়ে দেওয়া, বয়স্কদের একটু পারিবারিক সময় দেওয়া - দেখা যাবে, এটুকুতেই হয়ত অনেক সমস্যা কাছেই ঘেঁষবে না।
"একটু ভেবে দেখুন" পর্ব-১
"একটু ভেবে দেখুন" পর্ব-৩
আজ রিকশায় বাড়ি ফিরছিলাম। হঠাৎ একজনের কন্ঠস্বরে চমকে উঠলাম -
'ও ভাই রিকশা, কিসের এতো নকশা ?পা দুটোই তো আছে বেঁচে -তাও কি আজ দেবে ছেঁচে ?'
রিক্সাওয়ালা কি বুঝল কে জানে ! এক লম্ফ দিয়ে রিকশা নিয়ে উল্টোদিক থেকে আসা এক বাইকওয়ালার ঘাড়ে গিয়ে প্রায় পড়ে আর কি ?
কবির দিকে তাকিয়ে দেখলাম। বেশ লম্বা, পাতলা চেহারা। করোনা মুখোশে মুখ দেখা গেল না। অবিন্যস্ত চুল। আপন মনে বিড়বিড় করতে করতে চলেছে। তার 'ছড়া'য় যে কি হলো এদিকে, কোন ভ্রূক্ষেপ নেই সেদিকে।

একটি বহুল প্রচলিত বাংলা গানে 'এক পাগল সাপলুডো খেলেছে বিধাতার সঙ্গে - ফুটপাথের ঠিকানায় বসে'। খোঁজ নিলে দেখা যাবে, এই পাগলেরা হয়ত কোন ভদ্র-বংশের, ভাগ্যের ফেরে নিজের জীবনে বেঁচে থাকার অর্থ জোগাতে পারে নি - হয়তো পায়নি স্নেহময় ইশারায় এগিয়ে যাবার রাস্তা দেখানোর মত সহৃদয় কোনো আত্মীয়-পড়শিকে। তাই পরিবারের গঞ্জনা সইতে না পেরে রাস্তায় রাস্তায় ঘোরে। কখনও ছড়ায়, কখনও গান গেয়ে, আবার কখনও বিদ্বেষ-বশতঃ মানুষকে দু'কথা শুনিয়ে অন্যের চাহনিতে নিজেকে 'পাগল' প্রতিপন্ন করে। রাস্তায়-ঘাটে এমন বহু বৃদ্ধ-বৃদ্ধাদেরও চোখে পড়ে, শূন্যদৃষ্টি নিয়ে যারা উদ্দেশ্যহীন ঘুরে বেড়াচ্ছে।
কলকাতায় রবীন্দ্রসদন মঞ্চের ঠিক বাইরে গাছ-গাছালির সমারোহে নানাপ্রকার বসবার জায়গা রয়েছে। তার সামনের পথ ধরে একজন রোজ সন্ধেবেলা প্রায় টানা দু'ঘন্টা শুধু রবীন্দ্রসংগীত গেয়ে যেত। কেউ শুনছে কিনা তাতে তার কিছু এসে যেত না। পুরো রবীন্দ্রসদন চত্বর ঘুরে সে একের পর এক রবিঠাকুরের গান গাইতে গাইতে ঘুরপাক দিত। সকলে তাকে ডাকত 'মুখার্জীদা' বলে। জিজ্ঞেস করলেই বলত, 'হুঁ হুঁ বাপু, আমি রবিঠাকুরের সব গানই জানি। কোনটা শুনতে চাও বলো' ?
ইনিও হয়তো তেমনি কোন ছোটবেলার ইচ্ছেগুলোতে দাঁড়ি পড়া কোন 'পাগল'।
আমাদের আসে পাশেই এমন বেশ কিছু ছোট ছোট ছেলে-মেয়েদের আমরা দেখি, যারা হয়তো ভালবাসার অভাবে এমন পাগলামিতে নিজের চাওয়া-পাওয়াকে বিসর্জন দেয়। বেঁচে থাকতে যে রসদগুলো অতি সাধারণ এবং দৈনিক প্রয়োজনের - তা না পাওয়ার বেদনাকে হজম করতেও তো একপ্রকার মানসিক শক্তি লাগে ? এদের মানসিক শক্তিগুলোও হয়তো সেই ব্যবহারেই ক্ষয়ে গিয়ে মানসিক বিকারের দিকে এগিয়ে দিয়েছে, কে বলতে পারে !

উদাসীনতা, অবহেলা - যে কোন বয়সের সুস্থ মস্তিষ্কেও মানসিক বৈকল্যের বীজ বপণ করতে পারে। ধূসর চোখে সবুজ দেখানোটাও তো আমাদের অবশ্য-কর্মসূচির আওতায় আসতে পারে ? তাই না ?
একটু ভেবে দেখবেন।
"একটু ভেবে দেখুন" পর্ব-১
"একটু ভেবে দেখুন" পর্ব-৩
©tapanbasu. all rights reserved
photo courtesy - varun punj / lancasteronline
কবিতার দুটো লাইন অসাধারণ । ধ্রুব সত্য - যেখানে ইচ্ছের দাঁড়ি পড়ে, সেখান থেকেই পাগলামি শুরু হয় । কেও ধূসর রাজ্যে চলে যায় । কেওবা সবুজ খুঁজে পায় - স্ববলে বা অন্যের সহযোগিতায় ।
ReplyDelete