বড়ো বিস্ময় জাগে (পর্ব-৯) | Baro Bismay Jage Ep#9
বড়ো বিস্ময় জাগে
পর্ব-৯
.........."প্রভাতে উঠিয়া যখন মায়ের মৃত্যু-সংবাদ শুনিলাম, তখনও সে কথাটার অর্থ সম্পূর্ণ গ্রহণ করিতে পারিলাম না। বাহিরের বারান্দায় তাঁর সুসজ্জিত দেহে জীবন হইতে জীবনান্তের বিচ্ছেদ স্পষ্ট করিয়া চোখে পড়িল না। কেবল যখন তাঁহার দেহ বহন করিয়া সদর দরজার বাহিরে লইয়া গেল এবং আমরা তাঁহার পশ্চাতে শ্মশানে চলিলাম, তখনই সমস্ত শোকের ঝড় যেন একেবারে এক দম্কায় আসিয়া মনের ভিতরটাতে এই হাহাকার তুলিয়া দিল যে, এই বাড়ির এই দরজা দিয়া মা আর একদিনও তাঁহার নিজের এই চিরজীবনের ঘরে আপনার আসনটিতে আসিয়া বসিবেন না "........
'বড়ো বিস্ময় জাগে'/তপন বসু/পৃষ্ঠা-৯/চলবে ..........
পর্ব-৯
অস্পষ্ট মনে পড়ে মা-হারা বালক রবির সেদিনের কথা -
বালক রবি ও মা সারদা দেবী |
স্মৃতিপথে ছেলেবেলা বড়ই প্রভাব ফেলছে। আজ রবীন্দ্রনাথের অভিজ্ঞানী দৃষ্টিপথে কিছু বিশেষ মুহূর্ত যেন স্নায়ুকে দুর্বল করে দিচ্ছে।
এই তো সেদিনের কথা !
........."একদিন মধ্যাহ্নে খুব মেঘ করেছে। সেই মেঘলা দিনের ছায়াঘন অবকাশের আনন্দে বাড়ির ভিতরের এক ঘরে খাটের উপর উপুড় হইয়া পড়িয়া একটি স্লেট লইয়া লিখিলাম 'গহনকুসুমকুঞ্জমাঝে'। ...........
১৮৭৫ সালে পিতার সঙ্গে নৌকাভ্রমণে গিয়ে তাঁর বইগুলির মধ্যে কিশোর রবি একটি অতি পুরাতন ফোর্ট উইলিয়ামের প্রকাশিত 'গীতগোবিন্দ' খুঁজে পেয়েছিলেন।
........"সেই গীতগোবিন্দখানা যে কতবার পড়িয়াছি তাহা বলিতে পারি না"..........
'গহনকুসুমকুঞ্জমাঝে' লিখিয়া ভারি খুশি হইলাম। আমার এক বন্ধুকে বলিলাম, 'সমাজের লাইব্রেরি খুঁজিতে খুঁজিতে বহুকালের একটি জীর্ণ পুঁথি পাওয়া গিয়াছে, তাহা হইতে ভানুসিংহ নামক কোন প্রাচীন কবির পদ কপি করিয়া আনিয়াছি' - এই বলিয়া তাহাকে কবিতাগুলি শুনাইলাম। তিনি তো বিষম বিচলিত হইয়া উঠিলেন। কহিলেন, 'এ পুঁথি আমার নিতান্তই চাই। এমন কবিতা বিদ্যাপতি-চন্ডিদাসের হাত দিয়াও বাহির হইতে পারিত না'। ............
বিপদের আশংকা বুঝে বালক-কবি খাতা দেখিয়ে প্রমাণ করে দিলেন "এ লেখা সত্যই বিদ্যাপতি-চন্ডিদাসের হাত দিয়াও বাহির হইতে পারে না, কারণ এ আমারই লেখা"।
বন্ধু গম্ভীর হইয়া পড়িলেন। বলিলেন, 'হুঁ, নিতান্ত মন্দ হয় নাই'।
নতুন কাজে উপযুক্ত পারিশ্রমিক বা উৎসাহদান একালের মত সে যুগেও মহার্ঘ ছিল বলেই বোধ হয়। ব্যতিক্রমও নিশ্চই ছিল...... আজকেও আছে। কিন্তু এই কঠিন সত্যের মাঝে বালক-রবির প্রতিভা সম্পর্কে দিকে দিকে যে রটনা ছড়িয়ে পড়েছিল, সে বিষয় আরো একটি সুন্দর ঘটনার কথা বলে আজকের পর্ব শেষ করব।
সময়টা ১৮৭৭ খ্রিস্টাব্দ - রবির বয়স ১৬-১৭ বছর। সুপরিচিত কবি শ্রী নবীনচন্দ্র সেন তাঁর স্মৃতিকথায় উল্লেখ করছেন -
........."স্মরণ হয় ১৮৭৬-৭৭ খ্রিস্টাব্দে আমি কলিকাতায় ছুটিতে থাকিবার সময় কলিকাতার উপনগরস্থ কোন উদ্যানে 'ন্যাশনাল মেলা' দেখিতে গিয়েছিলাম। ....... এক বন্ধু আমায় পাকড়াও করিয়া বলিলেন, একটি লোক আমার সাথে পরিচিত হইতে চান। তিনি আমার হাত ধরিয়া উদ্যানের কোনায় এক বৃক্ষতলে লইয়া গেলেন। দেখিলাম, সেখানে সাদা ঢিলা ইজার-চাপকান পরিহিত এক সুন্দর নব-যুবক দাঁড়াইয়া আছেন। বৃক্ষতলে যেন একটি স্বর্ণ-মূর্তি স্থাপিত হইয়াছে। বন্ধু বলিলেন, ইনি মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথের কনিষ্ঠ পুত্র রবীন্দ্রনাথ। তাঁহার জ্যেষ্ঠ জ্যোতিরিন্দ্র প্রেসিডেন্সিতে আমার সহপাঠী ছিলেন। দেখিলাম - সেই রূপ, সেই পোশাক। করমর্দনের পালা শেষ হইলে রবীন্দ্রনাথ একটি নোটবুক বাহির করিয়া কয়েকটি গীত গাহিলেন ও কয়েকটি কবিতা পাঠ করিলেন। ....... কবিতার মাধুর্যে ও প্রস্ফুটিত প্রতিভার আভাসে আমি মুগ্ধ হইলাম। এর দুই-একদিন পরে বাবু অক্ষয়চন্দ্র সরকারের বাড়িতে এক নিমন্ত্রণে তাঁহাকে সেই গল্প বর্ণনা করিয়া বলিলাম যে ওই গান ও কবিতা শুনিয়া আমার বিশ্বাস হইয়াছে যে ভবিষ্যতে তিনি একজন প্রতিভাসম্পন্ন কবি ও গায়ক হইবেন। অক্ষয়বাবু বলিলেন, 'কে? রবি ঠাকুর বুঝি ? ও ঠাকুরবাড়ির কাঁচা মিঠা আম'।
আর গুরুদেবের ৮০ বছরের চোখ দিয়ে আমি আপনাদের সঙ্গে নিয়ে ফ্ল্যাশব্যাক দেখছি।
বিস্ময় কি জাগছে না ?
এই তো সেদিনের কথা !
বিদ্যাপতি |
১৮৭৫ সালে পিতার সঙ্গে নৌকাভ্রমণে গিয়ে তাঁর বইগুলির মধ্যে কিশোর রবি একটি অতি পুরাতন ফোর্ট উইলিয়ামের প্রকাশিত 'গীতগোবিন্দ' খুঁজে পেয়েছিলেন।
........"সেই গীতগোবিন্দখানা যে কতবার পড়িয়াছি তাহা বলিতে পারি না"..........
'গহনকুসুমকুঞ্জমাঝে' লিখিয়া ভারি খুশি হইলাম। আমার এক বন্ধুকে বলিলাম, 'সমাজের লাইব্রেরি খুঁজিতে খুঁজিতে বহুকালের একটি জীর্ণ পুঁথি পাওয়া গিয়াছে, তাহা হইতে ভানুসিংহ নামক কোন প্রাচীন কবির পদ কপি করিয়া আনিয়াছি' - এই বলিয়া তাহাকে কবিতাগুলি শুনাইলাম। তিনি তো বিষম বিচলিত হইয়া উঠিলেন। কহিলেন, 'এ পুঁথি আমার নিতান্তই চাই। এমন কবিতা বিদ্যাপতি-চন্ডিদাসের হাত দিয়াও বাহির হইতে পারিত না'। ............
বিপদের আশংকা বুঝে বালক-কবি খাতা দেখিয়ে প্রমাণ করে দিলেন "এ লেখা সত্যই বিদ্যাপতি-চন্ডিদাসের হাত দিয়াও বাহির হইতে পারে না, কারণ এ আমারই লেখা"।
বন্ধু গম্ভীর হইয়া পড়িলেন। বলিলেন, 'হুঁ, নিতান্ত মন্দ হয় নাই'।
নতুন কাজে উপযুক্ত পারিশ্রমিক বা উৎসাহদান একালের মত সে যুগেও মহার্ঘ ছিল বলেই বোধ হয়। ব্যতিক্রমও নিশ্চই ছিল...... আজকেও আছে। কিন্তু এই কঠিন সত্যের মাঝে বালক-রবির প্রতিভা সম্পর্কে দিকে দিকে যে রটনা ছড়িয়ে পড়েছিল, সে বিষয় আরো একটি সুন্দর ঘটনার কথা বলে আজকের পর্ব শেষ করব।
সময়টা ১৮৭৭ খ্রিস্টাব্দ - রবির বয়স ১৬-১৭ বছর। সুপরিচিত কবি শ্রী নবীনচন্দ্র সেন তাঁর স্মৃতিকথায় উল্লেখ করছেন -
অবন ঠাকুরের সঙ্গে রবীন্দ্রনাথ |
বিস্ময় কি জাগছে না ?
'বড়ো বিস্ময় জাগে'/তপন বসু/পৃষ্ঠা-৯/চলবে ..........
'বড়ো বিস্ময় জাগে'র ১ম পর্ব পড়তে চাইলে এখানে ক্লিক করুন।
©tapan basu. all rights reserved.
Image Courtesy > (1)getbengal (2)mypoeticside (3)ministryofculture-india
©tapan basu. all rights reserved.
Image Courtesy > (1)getbengal (2)mypoeticside (3)ministryofculture-india
সমৃদ্ধ হলাম অনেক কিছু জানছি।
ReplyDelete