বড়ো বিস্ময় জাগে (পর্ব-৮) | Baro Bismay Jage Ep#8
বড়ো বিস্ময় জাগে
পর্ব-৮
গুরুদেবের গান নিয়ে আলোচনা করতে গেলে ভারতীয় সংগীত সম্বন্ধে কিছু জ্ঞান থাকা দরকার, তা' অনুভব করেছি। তাই নিজের উদ্যোগে সরাসরি গিয়ে হাজির হই শ্রী নীহাররঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায় মহাশয়ের বাড়ি। অকপটে জানাই যে আমি শ্রী দ্বিজেন মুখোপাধ্যায়ের ছাত্র। সেখানে গান শিখতে গিয়ে আমার মনে হয়েছে, আমি তাঁর দেখানো গানের অন্তর্নিহিত ভাব আরো অনুভব করতে পারব যদি ভারতীয় রাগ সংগীত সম্পর্কে জানতে পারি। তাই আপনার কাছে এসেছি।
গুরুদেবের চিঠি লিখেছিল, 'আমার গান তখন অবজ্ঞার এমনকি বিদ্রুপের বিষয় ছিল। কিন্তু আমার জীবন ছিল রসে পূর্ণ, সেই কথা মনে করিয়ে দিল তোর লেখা। .........রাখাল যেমন একলা মনের আনন্দে কর্মহীন প্রহর ভাসিয়ে দেয় সুরে সুরে - আমারও সেই দশা ছিল। দেহলিপাড়ায় আমার কর্মভূমির নেপথ্যে নিরন্তর গান-সৃষ্টির আনন্দে ঝাপসা হয়ে যেত অন্য কর্মের ধারা'।
©tapan basu. all rights reserved.
Image Courtesy > (1)swarnamanttra (2)thedailystar (3)realtymyths
পর্ব-৮
সঙ্গীতজ্ঞ তানসেন সম্রাট আকবরের দরবারে |
রবিঠাকুরের গান নিয়ে আমরা আজকের দিনেও 'বাণী'র দিকে অনেক বেশি নজর দেই। কিন্তু সে সময় তাঁর গান ভারতীয় সংগীতে কতটা পরিবর্তন এনেছিল, তা অনেক সময়েই আলোচনার বাইরে থেকে যায়। এ কথা বলছেন আচার্য শান্তিদেব ঘোষ। শান্তিদেব গুরুদেবের গান নিয়ে বই প্রকাশে উদ্যোগী হয়েছেন এবং তার প্রাথমিক খসড়া গুরুদেবকে শোনাতে তিনি শান্তিদেবকে এতো চমৎকার এক চিঠি লেখেন ১৯৪১ এর গোড়ার দিকে যে, শান্তিদেবে ঘোষের বই লেখার তাগিদ বহুলাংশে বেড়ে যায়। একজন বিশ্বমাপের স্রষ্টার ক্ষেত্রেও তাঁর তৈরী করা গান সম্পর্কে মানুষের তৎকালীন অবহেলা যে রবীন্দ্রনাথকে কতটা আঘাত দিয়েছিল, তা হয়তো শান্তিদেবকে লেখা চিঠিটাই তার প্রমাণ।
গুরুদেবের নিজ-হাতে লেখা একটি চিঠি |
বিস্ময় এখানেই - লিখতে বসে যে মানুষ ভুবন ভুলতে পারেন, শিশুর আনন্দে আত্মবিস্মৃত হতে পারেন, তিনি পারিপার্শ্বিক পরিবেশ নিয়ে এতো সচেতন হন কি করে ? এখানেই যে অসাধারণত্বের নমুনা।
রবীন্দ্রনাথের গান আমার মনে হয় একটি যুগের প্রবর্তন। যাকে রবীন্দ্রযুগ বললে হয়তো অত্যুক্তি হবে না। তিনি বলছেন -
'......গানে সুরের বাহন এমন এক সত্যলোকে আমাদের নিয়ে যায়, যেখানে পায়ে হেঁটে যাওয়া যায় না, যেখানে যাবার পথ কেউ চোখে দেখে নি।
এই কারণেই আমার বিস্ময় জাগে যে তিনি গান ও তার সুরের মধ্যে যে দাম্পত্য মিলন প্রতিষ্ঠা করেছেন, সেটাই সত্যের পথে রবিঠাকুরের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। তাই তা এতটাই সমকালীন ও প্রাসঙ্গিক।
আমাদের কি মনে হয় কখনও যে অমুক গানটায় সুরটা অন্য হলে পারত বা এতো অপূর্ব সুরে কথা ঠিক খাপ খায় নি। না, তেমনটা কাউকে বলতে শুনি না। তাই খুব ছোট বয়সেই তাঁর চোখে যা পড়েছে, তা খুব গভীর রেখাপাত করেছে মনের অভ্যন্তরে। নানা রচনায় সেই অনুভব প্রকাশিত।
ছেলেবেলায় গেলেন অমৃতসর - বাবা দেবেন্দ্রনাথের সঙ্গে। সেখানে
সম্ভবতঃ গুরুদরবারে বিভিন্ন শিখ ভজনের সঙ্গে গুরুনানক রচিত আরও একটি গান শোনেন - 'গগনময়ী থাল, রবি চন্দ্র দীপক বনে' । যার মূল রচনা হয়ত তিনি পড়ে থাকবেন তত্ত্ববোধিনী পত্রিকায়। ১১ বছরের রবীন্দ্রনাথ অনুবাদ করলেন "গগনের থালে রবি চন্দ্র দীপক জ্বলে"। দ্বিমত থাকলেও এই রচনা যে স্বয়ং রবীন্দ্রনাথের, তা তিনি নিজেই স্বীকার করেছেন ১৯৩৯এ। মৃত্যুর ঠিক দু'বছর আগে।
বিস্ময়কর কি কি ? ১১ বছর মাত্র বয়স, তত্ত্ববোধিনী পত্রিকা পাঠ, সেখানে উল্লিখিত কোন মূল রচনা যা ওই বয়সের এক শিশুকে ভাবাচ্ছে অমৃতসরে গুরুদরবারে। অনুপ্রাণিত করছে সেখানে শোনা শিখ ভজনের আবহে মূল গানের বাংলা রূপায়ণে।
আজ ৮০ বছরের জীবনসায়াহ্নে পুরনো ঘটনার কথা বড় ভাবাচ্ছে তাঁকে। ছেলেবেলার কথাই বারবার স্মৃতিপথে নাড়া দিয়ে যাচ্ছে।
আমার বিস্ময়বোধের দৃষ্টিতে তাঁকে খুঁজে পাবার অছিলায় এই প্রবন্ধ-তর্পণ। আগামীপর্বে ছেলেবেলার আরও ঘটনা ও গল্প।
রবীন্দ্রনাথের গান আমার মনে হয় একটি যুগের প্রবর্তন। যাকে রবীন্দ্রযুগ বললে হয়তো অত্যুক্তি হবে না। তিনি বলছেন -
'......গানে সুরের বাহন এমন এক সত্যলোকে আমাদের নিয়ে যায়, যেখানে পায়ে হেঁটে যাওয়া যায় না, যেখানে যাবার পথ কেউ চোখে দেখে নি।
এই কারণেই আমার বিস্ময় জাগে যে তিনি গান ও তার সুরের মধ্যে যে দাম্পত্য মিলন প্রতিষ্ঠা করেছেন, সেটাই সত্যের পথে রবিঠাকুরের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। তাই তা এতটাই সমকালীন ও প্রাসঙ্গিক।
আমাদের কি মনে হয় কখনও যে অমুক গানটায় সুরটা অন্য হলে পারত বা এতো অপূর্ব সুরে কথা ঠিক খাপ খায় নি। না, তেমনটা কাউকে বলতে শুনি না। তাই খুব ছোট বয়সেই তাঁর চোখে যা পড়েছে, তা খুব গভীর রেখাপাত করেছে মনের অভ্যন্তরে। নানা রচনায় সেই অনুভব প্রকাশিত।
ছেলেবেলায় গেলেন অমৃতসর - বাবা দেবেন্দ্রনাথের সঙ্গে। সেখানে
অমৃতসর শহর |
বিস্ময়কর কি কি ? ১১ বছর মাত্র বয়স, তত্ত্ববোধিনী পত্রিকা পাঠ, সেখানে উল্লিখিত কোন মূল রচনা যা ওই বয়সের এক শিশুকে ভাবাচ্ছে অমৃতসরে গুরুদরবারে। অনুপ্রাণিত করছে সেখানে শোনা শিখ ভজনের আবহে মূল গানের বাংলা রূপায়ণে।
আজ ৮০ বছরের জীবনসায়াহ্নে পুরনো ঘটনার কথা বড় ভাবাচ্ছে তাঁকে। ছেলেবেলার কথাই বারবার স্মৃতিপথে নাড়া দিয়ে যাচ্ছে।
আমার বিস্ময়বোধের দৃষ্টিতে তাঁকে খুঁজে পাবার অছিলায় এই প্রবন্ধ-তর্পণ। আগামীপর্বে ছেলেবেলার আরও ঘটনা ও গল্প।
'বড়ো বিস্ময় জাগে'/তপন বসু/পৃষ্ঠা-৮/চলবে ..........
©tapan basu. all rights reserved.
Image Courtesy > (1)swarnamanttra (2)thedailystar (3)realtymyths
Comments
Post a Comment