বড়ো বিস্ময় জাগে (পর্ব-১৩) | Baro Bismay Jage Ep#13

বড়ো বিস্ময় জাগে 
পর্ব-১৩
পশ্চিমের বারান্দা - জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ি
বিশ্ব-শিক্ষা ও সংস্কৃতির আলিঙ্গনে বিশ্বভারতীর বুকে আশ্রিত বিশ্বকবি বিশ্বভ্রমণ করবেন - এতে আর আশ্চর্যের কি আছে? গোবিন্দপুর থেকে কলকাতা - ভুবনডাঙ্গা থেকে শান্তিনিকেতন। ঠাকুরবাড়ির দেওয়ালে কত অম্ল-মধুর স্মৃতির কবিতা; আর বিশ্বভারতীর মাটিতে ঈশ্বর ও প্রকৃতির মিলেমিশে স্বর্গরচনা। 

তেতলায় মহর্ষির ঘর
তবু আমরা আশ্চর্য হই, বিস্মিত হই। আজ চোখের দৃষ্টি ঝাপসা, সব ছবি স্পষ্ট দেখা যায় না। 
তবু মনে পড়ে -
......"একদিন তেতলায় পিতার ঘর থেকে ডাক এলো - 'হিমালয় যাচ্ছেন, বালক তাঁর সঙ্গে যেতে চান কি ?' 
- এই 'চাই' কথাটা চিৎকার করে আকাশ ফাটিয়ে বলা গেলে মনের সঠিক ভাবটি প্রকাশ পেত। "কোথায় বেঙ্গল একাডেমি আর কোথায় হিমালয় ?"
পাহাড়ে যাবার পথে পিতাপুত্র কয়েকদিন শান্তিনিকেতনে থেকে গেলেন। 
'বেশ মনে পড়ে এখনও -
১৮৭৩-এর বোলপুর নগণ্য এক গ্রাম। স্টেশন থেকে মাইল দেড়েক দূরে কুড়ি বিঘা জমি কিনে দেবেন্দ্রনাথ ছোট একটি একতলা পাকা বাড়ি নির্মাণ করিয়েছিলেন; বাড়ির নাম দেন শান্তিনিকেতন। চারিদিকে ধূ-ধূ  মাঠ, একটা অসম্পূর্ণ পুষ্করিণী। দূরে ভুবনডাঙা গ্রামের বাঁধ, তালের সারিতে ঘেরা - এখন সে তালগাছ একটাও নেই। পরে এখানে পিতা আশ্রম স্থাপন ও মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন। বোলপুর-শান্তিনিকেতনের সঙ্গে সেই আমার প্রথম পরিচয় '।.......

আমার আশ্চর্য লাগে, রবিজীবনে কোন ভ্রমণই তো নিছক দেশভ্রমণ হয়ে ওঠে নি ! সেই শিশুকাল থেকেই রবীন্দ্রনাথের সামনে মহর্ষি বিশ্বজগতের অপার সৌন্দর্যের যে আশ্চর্য দুয়ার খুলে দিয়েছিলেন - তারির উপাসনাই করে গেছেন রবিঠাকুর সারাজীবন। প্রত্যেকটি দেশ-ভ্রমণ তাঁর পুঁজিতে জমা হয়েছে শিল্পকীর্তির নতুন উপাদান হিসেবে। এতে বাঙালি তো বটেই, সারা ভারতবাসীই গর্বিত হবার রসদ খুঁজে পেয়েছে। 

বিভিন্ন প্রান্তের ভারতীয়রা কেমন শ্রদ্ধা করতেন তাঁকে, তার একটা ছোট্ট গল্প মনে পড়ছে। 

সারাভাই-এর বাড়িতে রবীন্দ্রনাথ ১৯২০ 
বলব সারাভাই পরিবারের কথা।  আহমেদাবাদের এই পরিবার ছিলেন প্রকৃত শিল্প-প্রেমিক। ভারতীয় শিল্পের প্রচার ও প্রসারে এদের অবদান অনস্বীকার্য। ১৯২০ খ্রিস্টাব্দের কথা - যখন ভারতীয় শিল্পকলাকে কদর করবার মত চমৎকার মানুষজনেরা ছিলেন। যাঁরা তাঁদের ঘরোয়া পরিবেশের মধ্যেই গুণী শিল্পীর সম্মান জানাতে কুন্ঠা করতেন না, উপরন্তু দুই পা বাড়িয়ে থাকতেন এমন মুহূর্তের সন্ধানে। এই সারাভাই পরিবারে পা রেখেছিলেন রবিঠাকুর, শুধুমাত্র এঁদের শিল্পপ্রীতির প্রতি মুগ্ধ হয়ে। এখানে উল্লেখ করলাম এই কারণে যে, অবাঙালি হয়েও এনারা শিল্প-চর্চায় ব্রতী কোন কৃতী ব্যক্তির নাম স্মরণে আনলে সেখানেও প্রথম পছন্দ আমাদের রবীন্দ্রনাথ। একথা আমরা জানতে পারি সারাভাইদের পারিবারিক ইতিহাস ঘাঁটলে। কি আশ্চর্য লাগে, তাই না? 

কার আমন্ত্রণে আর কেন কবির এই আহমেদাবাদ সফর ছিল জানেন ? সে এক অন্য কাহিনি। পরের পর্বে।

'বড়ো বিস্ময় জাগে'/তপন বসু/পৃষ্ঠা-১৩/চলবে ..........

'বড়ো বিস্ময় জাগে'র পরের পর্ব (১৪) পড়তে চাইলে এখানে ক্লিক করুন
'বড়ো বিস্ময় জাগে'র ১ম পর্ব পড়তে চাইলে এখানে ক্লিক করুন। 

©tapan basu. all rights reserved.
Image Courtesy >(1-2)biswarupganguly.gnu (3)tribune 

Comments

Popular posts from this blog

তপনের ডায়েরি ৭ / ৩১ আগস্ট ২০২১

তপনের ডায়েরি ৫ / ৫ আগস্ট ২০২১

স্টেরয়েড ছোট গল্প রচনা : তপন বসু