সাগরপারের ডায়েরি (পর্ব-২০) | Sagarparer Diary (Episode-20)
সাগরপারের ডায়েরি
পর্ব-২০
আজকের প্রসঙ্গ : মূল অনুষ্ঠান
এবার আমাদের অনুষ্ঠানের কথা।
নির্দিষ্ট সময়ে শুরু হলো এই সন্ধ্যার সাংস্কৃতিক পথচলা। নানাভাবে পালিত হবে রবীন্দ্রজন্মের সার্ধশতবর্ষ। স্বাধীনতার উত্তরযুগে তাঁর গান কেমন করে বাঙালির নিত্যপূজা হয়ে উঠল, গানে-গল্পে তারই পর্যালোচনা। 'সাগরপারের ডায়েরি'র পূর্ববর্তী পর্বে আমি জানিয়েছিলাম এই অনুষ্ঠানের মূল ভাবনা ঠিক কি ছিল। আজ একটু হলেও ছোট্ট করে সেই অনুষ্ঠানের বিবরণ দেবার চেষ্টা করব - আর জানাব কবিগুরুর অপার নির্মাণকৌশলকে পাথেয় করে IIPAর অপরিসীম পরিশ্রম, সুপর্ণাদির ভাবনা ও সাংগঠনিক প্রয়াস, আমার লেখা, সঞ্চালনা ও বহু গুণীজনের অতি-উৎকৃষ্ট সাঙ্গীতিক পরিবেশনা কেমন করে উপস্থিত শ্রোতাদের আবিষ্ট করেছিল ।
কলা-প্রদর্শণের সময়ে শিল্পী ও শ্রোতাদের মস্তিস্ক-নিঃসৃত সূক্ষ্ণ নৈর্ব্যক্তিক আদান-প্রদান ঠিক লিখে বোঝানো সম্ভব নয়। তবু কখনও যদি সাদা-কালোর জগতে সেই আনন্দযজ্ঞের হোমকুন্ড জ্বলে, তার আচারে পবিত্র হতে বাধা কোথায় ?
....."প্রাণ আপনি চায় চলিতে; সেই তাহার ধর্ম। এইজন্য নানা আয়োজনের-প্রয়োজনের খেলার ছুতোয় সে কেবল চলে। .......যাত্রা করিলে তবেই আমাদের দৃষ্টিশক্তির জড়তা কাটিয়া যায়।
.....অনুষ্ঠানের শিরোনাম ছিল "যাত্রী আমি"। কবির উপরোক্ত বক্তব্যে যে চলার কথা প্রকট হয়েছে - তাকে ঘিরেই এই "যাত্রী আমি"। সমগ্র সন্ধ্যের অনুষ্ঠানকে বিন্যাস করা হল তিনটি পর্বে ...........
১ম পর্ব - স্মরণ । ২য় পর্ব - মূল্যায়ণ । ৩য় পর্ব - তর্পণ
সত্যজিৎ রায় স্মরণ করেছিলেন রবীন্দ্রনাথকে - তাঁর জন্মের শততম বর্ষে। তাঁর তৈরী ডকুমেন্টারী থেকে 'পায়ে চলার পথ'কে তুলে আনা হল "যাত্রী আমি"র চলার মন্ত্রকে বোঝাতে - আরেক অনন্যের সৃষ্টির মন্ত্রে রবীন্দ্রপুজো। রবীন্দ্রনাথকে ঘরে ঘরে পৌঁছে দিয়েছেন যাঁরা, তাঁদের মধ্যে সন্দেহাতীতভাবে অগ্রগণ্য শ্রী পঙ্কজ কুমার মল্লিক। তিনি বলছেন -
.......জন্মের প্রথম শুভক্ষণ থেকেই হয়তো আত্মার যোগাযোগ রবিঠাকুরের সঙ্গে - আমারও তো বৈশাখেই জন্ম - ১০ই মে ১৯০৫। .......
মোহনদা বললেন, 'যে কোন স্রষ্টার তৈরী যে কোন সুর একটা ঘরানাকে প্রকাশ করে। বোঝা যায় এটি অমুকের সুর। 'দিনের শেষে' গানটি নাড়া দিয়েছিল কবির মর্মবোধে। শুনলে বোঝা যায় না এ সুর রবীন্দ্রসৃষ্ট নয়'।
তিনি কণ্ঠ মেলালেন পঙ্কজবাবুর রেকর্ডের সঙ্গে - অমৃতের ভাণ্ডার আরো পরিপূর্ণ হল। শুভাশীষ শুধুমাত্র Mime করলেন এ গানে। স্মরণের সেই সন্ধ্যেবেলার প্রথম উপস্থাপনা চারিপাশকে কেমন মায়াজালে আবদ্ধ করে ফেললো ...... মঞ্চে পিন পড়লেও শোনা যাবে। শিল্পী-শ্রোতা এক লহমাতেই একাত্ম হলেন - মন আরো পিপাসার্ত হল অমৃতের সন্ধানে।
পরবর্তী স্মরণ শ্রী হেমন্ত মুখোপাধ্যায়।
আমি স্মরণ করলাম ১৯৮৬ সালে তাঁর কাছে শোনা একটি উপদেশ, 'তপন, রবিঠাকুরের শুধু গান নয়, তাঁর সমস্তের প্রতি তোমার ভালোবাসা যদি ধরে রাখতে পারো, একদিন দেখবে তিনি তোমার কাছে কেমন করে ধরা দেবেন। আমি ছবির music করতে গেলেই মনে আসে কত গান'.........
সত্যিই তো ! বাংলা চলচ্চিত্রের একচ্ছত্র সম্রাট - সংগীত পরিচালক - নইলে তাঁর অধিকাংশ বাংলা ছবিতে কেনই বা এত রবীন্দ্রসংগীতের ব্যবহার করবেন ? শুধু তাই নয়, তাঁর স্বর্ণকণ্ঠ আপামর বাঙালিকে রবীন্দ্রসংগীত গুনগুন করে গাইতে বাধ্য করেছে - সেই ১৯৪৪ থেকে - যেদিন তাঁর প্রথম রবীন্দ্রসংগীতের রেকর্ড বের হয় কলম্বিয়া কোম্পানি থেকে - এও তো উজ্জ্বল সত্য। অগাস্ট এর ঐ সন্ধ্যায় তাঁর গাওয়া 'এমন দিনে তারে বলা যায়' বাজল।
এমন দিনে আরও অনেক কিছু বলা যায় - যখন শ্রোতা হয়ে ওঠেন নিবিড়, সংগীতের মূর্ছনায় আত্মবিস্মৃত। তখন তিনি শিল্পীর মনস্তত্বের পৃষ্ঠপোষক। মনের আদান-প্রদানে কোন আড়াল কি আর থাকে তখন ?
রবীন্দ্রগানে আরেক দিশারি শ্রী দেবব্রত বিশ্বাস - সবার প্রিয় জর্জদা। তাঁকে নিয়ে মনে এলো কয়েকটি লাইন। ব্যক্ত করলাম শ্রোতাদের কাছে। আপনাদেরকেও নিশ্চই শোনাব - তবে আজ নয় ....... পরের পর্বে।
সাগরপারের ডায়েরি/তপন বসু/পৃষ্ঠা-২০/চলবে ..........
'সাগরপারের ডায়েরি'র ১ম পর্ব পড়তে চাইলে এখানে ক্লিক করুন।
'সাগরপারের ডায়েরি'র পর্ব-২১ পড়তে চাইলে এখানে ক্লিক করুন।
এবার আমাদের অনুষ্ঠানের কথা।
নির্দিষ্ট সময়ে শুরু হলো এই সন্ধ্যার সাংস্কৃতিক পথচলা। নানাভাবে পালিত হবে রবীন্দ্রজন্মের সার্ধশতবর্ষ। স্বাধীনতার উত্তরযুগে তাঁর গান কেমন করে বাঙালির নিত্যপূজা হয়ে উঠল, গানে-গল্পে তারই পর্যালোচনা। 'সাগরপারের ডায়েরি'র পূর্ববর্তী পর্বে আমি জানিয়েছিলাম এই অনুষ্ঠানের মূল ভাবনা ঠিক কি ছিল। আজ একটু হলেও ছোট্ট করে সেই অনুষ্ঠানের বিবরণ দেবার চেষ্টা করব - আর জানাব কবিগুরুর অপার নির্মাণকৌশলকে পাথেয় করে IIPAর অপরিসীম পরিশ্রম, সুপর্ণাদির ভাবনা ও সাংগঠনিক প্রয়াস, আমার লেখা, সঞ্চালনা ও বহু গুণীজনের অতি-উৎকৃষ্ট সাঙ্গীতিক পরিবেশনা কেমন করে উপস্থিত শ্রোতাদের আবিষ্ট করেছিল ।
কলা-প্রদর্শণের সময়ে শিল্পী ও শ্রোতাদের মস্তিস্ক-নিঃসৃত সূক্ষ্ণ নৈর্ব্যক্তিক আদান-প্রদান ঠিক লিখে বোঝানো সম্ভব নয়। তবু কখনও যদি সাদা-কালোর জগতে সেই আনন্দযজ্ঞের হোমকুন্ড জ্বলে, তার আচারে পবিত্র হতে বাধা কোথায় ?
....."প্রাণ আপনি চায় চলিতে; সেই তাহার ধর্ম। এইজন্য নানা আয়োজনের-প্রয়োজনের খেলার ছুতোয় সে কেবল চলে। .......যাত্রা করিলে তবেই আমাদের দৃষ্টিশক্তির জড়তা কাটিয়া যায়।
.....অনুষ্ঠানের শিরোনাম ছিল "যাত্রী আমি"। কবির উপরোক্ত বক্তব্যে যে চলার কথা প্রকট হয়েছে - তাকে ঘিরেই এই "যাত্রী আমি"। সমগ্র সন্ধ্যের অনুষ্ঠানকে বিন্যাস করা হল তিনটি পর্বে ...........
১ম পর্ব - স্মরণ । ২য় পর্ব - মূল্যায়ণ । ৩য় পর্ব - তর্পণ
![]() |
পঙ্কজ কুমার মল্লিক |
.......জন্মের প্রথম শুভক্ষণ থেকেই হয়তো আত্মার যোগাযোগ রবিঠাকুরের সঙ্গে - আমারও তো বৈশাখেই জন্ম - ১০ই মে ১৯০৫। .......
মোহনদা বললেন, 'যে কোন স্রষ্টার তৈরী যে কোন সুর একটা ঘরানাকে প্রকাশ করে। বোঝা যায় এটি অমুকের সুর। 'দিনের শেষে' গানটি নাড়া দিয়েছিল কবির মর্মবোধে। শুনলে বোঝা যায় না এ সুর রবীন্দ্রসৃষ্ট নয়'।
![]() |
শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধী গাইছেন রবীন্দ্রসংগীত, শ্রী পঙ্কজ মল্লিকের নির্দেশনায় |
পরবর্তী স্মরণ শ্রী হেমন্ত মুখোপাধ্যায়।
![]() |
হেমন্ত মুখোপাধ্যায় |
![]() |
গায়ক কিশোর কুমার যখন সংগীত পরিচালনায় হেমন্ত কুমার |
এমন দিনে আরও অনেক কিছু বলা যায় - যখন শ্রোতা হয়ে ওঠেন নিবিড়, সংগীতের মূর্ছনায় আত্মবিস্মৃত। তখন তিনি শিল্পীর মনস্তত্বের পৃষ্ঠপোষক। মনের আদান-প্রদানে কোন আড়াল কি আর থাকে তখন ?
রবীন্দ্রগানে আরেক দিশারি শ্রী দেবব্রত বিশ্বাস - সবার প্রিয় জর্জদা। তাঁকে নিয়ে মনে এলো কয়েকটি লাইন। ব্যক্ত করলাম শ্রোতাদের কাছে। আপনাদেরকেও নিশ্চই শোনাব - তবে আজ নয় ....... পরের পর্বে।
সাগরপারের ডায়েরি/তপন বসু/পৃষ্ঠা-২০/চলবে ..........
'সাগরপারের ডায়েরি'র ১ম পর্ব পড়তে চাইলে এখানে ক্লিক করুন।
'সাগরপারের ডায়েরি'র পর্ব-২১ পড়তে চাইলে এখানে ক্লিক করুন।
©tapan basu. all rights reserved.
Picture Courtesy >(1)medium (2)medium (3)dna india (4)indian express
তিব্র ব্যকুলতা পরের পর্ব কখন আসবে। কি অপূর্ব সাজানো ডালি নিয়ে অনুষ্ঠানের সুচনা।আমার স্পষ্ট ছবি হয়ে উঠছে চোঁখে। আমি যেন অনুষ্ঠানে উপস্থিত।কলমে এ হেন চিত্র ফোটাতে শিল্পীর পক্ষে ই সম্ভব।আজ শিল্পী তপন বসুকে জানাই আমার শ্রদ্ধা ও প্রনাম।🙏🙏🙏
ReplyDelete