সাগরপারের ডায়েরি (পর্ব-১৬) | Sagarparer Diary (Episode-16)

সাগরপারের  ডায়েরি
পর্ব-১৬
আজকের প্রসঙ্গ : ছেলেবেলা ও আমার গান 

আজ ৬ই আগস্ট - সকাল ৯টা বাজল। রাতে ভাল ঘুম হল না। সময়গুলো কেমন স্বপ্নের মত পার হয়ে যাচ্ছে। জেটল্যাগ বস্তুটা যে কি, তা এসে ইস্তক বুঝতে পারিনি। ব্যাঙ্কে চাকরি করি, স্বভাবতই অফিসফেরত গানবাজনাকে প্রশ্রয় দিয়ে ঘুমোতে বেশ রাত হয়। কিন্তু সে প্রথা যে সুদূর প্রবাসেও আমার পিছু ছাড়বে না, তা কেমন করে জানবো ?

সকলে মিলিত হলাম প্রাতঃরাশ টেবিলে। সারাদিনের নিরিখে আমার সবচেয়ে প্রিয় আহার। নানা বাহারে আহার-পর্ব মিটতে ঘন্টাখানেক সময় পার হয়ে গেল। আমাদের অনুষ্ঠান আগামীকাল - ৭ তারিখে। আজ আরেক দফা রিহার্সাল এবং কিছু সংস্কৃতিপ্রেমী মানুষের সঙ্গে দেখা করা - এই হল আজকের Agenda। ডঃ গুহ ফোন করে জানালেন যে আমরা যেন ঠিক ১টায় লাঞ্চ করে তৈরী থাকি, তিনি গাড়ি পাঠাবেন। যেতে হবে একটু দূর পথ। USA-তে ৮০/১০০ মাইলের দূরত্বকে কেউ তোয়াক্কাই করে না। 

পরিবেশ মনের ওপর বেশ প্রভাব ফেলেছে। ডঃ গুহ'র বাড়িতে যাওয়ার আগে কালকের অনুষ্ঠানের স্ক্রিপ্ট লিখতে বসলাম। বেশ খানিকটা কাজ আগেই সেরে রেখেছিলাম। এবার একটু গুছিয়ে নেবার পালা। অনুষ্ঠানের বিষয়বস্তুও বেশ অভিনব। রবীন্দ্রসংগীতের এই যে আকাশচুম্বী জনপ্রিয়তা - সময় এবং স্থান নির্বিশেষে - তা' কি শুধুমাত্র রবিঠাকুরের গানের বাণী ও সুরের ওজস্বিতায় ? নাকি এই গান কণ্ঠে নিয়ে যে কিংবদন্তি শিল্পীরা শ্রোতাদের কাছে পৌঁছেছেন, বিশ্বের নানা প্রান্তে শুনিয়েছেন ঠাকুরের গান - নিজের জীবনের সঙ্গে সম্পৃক্ত করে নিয়েছেন ঠাকুরের দর্শনকে - রবীন্দ্রসংগীতের তুমুল জনপ্রিয়তার পিছনে এঁদের ভূমিকাও সমতুল্ভাবে প্রনিধানযোগ্য ? বেশ চ্যালেঞ্জিং সাবজেক্ট এবং তর্ক-বিতর্কের দাবিদার। এই নিয়েই সাজিয়ে তুলতে হবে আমাকে আমার মত করে। 
ছেলেবেলার কথা খুব মনে পড়ছে। এই ডায়েরি লিখতে গিয়ে শুধু সাতদিন নয়, হয়তো নিজের জীবনের কিছু স্মৃতির পাতাও উঠে আসছে। ছেলেবেলার তেমনি একটা দিন। আমার মায়ের এক বুক ইচ্ছেকে সঙ্গী করে বাবার হাত ধরে ১৪ বছরের আমি গান শেখার আগ্রহে হাজির হলাম স্বনামধন্য সংগীতশিল্পী শ্রী দ্বিজেন মুখোপাধ্যায়ের বাসগৃহে। বহু সাধ্য-সাধনার পর অষ্টম দিনে তাঁকে আমার গান শেখার বাসনার কথা বলতে পেরেছিলাম - উনি আমার কাছে গান শুনতে চেয়েছিলেন। সেই রবীন্দ্রনাথ - আমাদের মর্মবোধের নিত্যসঙ্গী। দাদার ঘরে ছাত্র হিসেবে ঠাঁই পেলাম - আরও কিছুদিনের মধ্যেই পাকাপাকিভাবে আসন হল তাঁর মনের ঘরে। গুরু-শিষ্যের যুগলবন্দিতে রবীন্দ্র-দর্শনকে পাথেয় করে তরতরিয়ে চলতে লাগলো আমাদের সংগীতসংস্থা 'উত্তরায়ণী'র গানের তরী। এ বিষয়ে বিশদ বলবার ইচ্ছে রইল পরে কখনো যদি তেমন সুযোগ পাই। 

পথিকৃৎ রবীন্দ্রনাথ ও তাঁর পথে হেঁটে যাওয়া দিকপাল শিল্পী-গবেষকরা। ওই অনুষ্ঠানের মূল বক্তব্যটি গভীরভাবে বাঁধা পড়লো রবীন্দ্রনাথের গান-সংক্রান্ত এই চলা নিয়ে।
'আমি সদা অচল থাকি 
গভীর চলা গোপন রাখি 
আমার চলা যায় না বলা' .......

এই চলার কথা নিশ্চই বলব, তবে পরের পর্বে ............

সাগরপারের ডায়েরি/তপন বসু/পৃষ্ঠা-১৬/চলবে ..........

'সাগরপারের  ডায়েরি'র পরবর্তী পর্ব (১৭তম) পড়তে চাইলে এখানে ক্লিক করুন। 

'সাগরপারের  ডায়েরি'র ১ম পর্ব পড়তে চাইলে এখানে ক্লিক করুন। 

©tapan basu. all rights reserved.
Picture Courtesy > Cinestaan 

Comments

Popular posts from this blog

তপনের ডায়েরি ৭ / ৩১ আগস্ট ২০২১

তপনের ডায়েরি ৫ / ৫ আগস্ট ২০২১

স্টেরয়েড ছোট গল্প রচনা : তপন বসু