সাগরপারের ডায়েরি (পর্ব-১৪) | Sagarparer Diary (Episode-14)

সাগরপারের  ডায়েরি
পর্ব-১৪
আজকের প্রসঙ্গ : এলেম নতুন দেশে  

নিউ জার্সি'র সমুদ্রতটের ঠিক উল্টো প্রান্তে হাওয়া ও কফি - দুটোই প্রাণ ভ'রে উপভোগ করছি। কুড়ি ছোঁয়া যে মার্কিন সুন্দরীরা রেস্তোরাঁয় আমাদের রসনাপূর্তিতে সাহায্য করছেন - তাদের দেখে 'কলেজ পড়ুয়া' বলেই মনে হল। 

'এলেম নতুন দেশে' - তাই বাঙালির আভিজাত্যের সংকোচ গোপন করে নিজেকে একটু গুছিয়ে নিয়ে একটু বাঙালি বাঙালি দেখতে গোলগাল মুখের এক বিদেশিনীকে প্রশ্নটা করেই ফেললাম - 
'আচ্ছা, আপনারা এখানে যারা আপ্যায়নে আছেন, তারা কি সকলেই College Student ? 
স্মিত হেসে মেয়েটি বললো, 'আমরা সকলেই ম্যানেজমেন্ট পড়ছি। দিনে কলেজ করি, সন্ধেবেলায় অতিথিসেবা। এতে আমাদের পড়ার খরচ আর পকেট মানি - দুটোই উঠে আসে'। 
তার ইংরেজি উচ্চারণে মার্কিন টান - তবু বুঝতে অসুবিধে হল না। খরিদ্দারের ভিড়ে কথা এর বেশি এগোল না। সেই মুহূর্তে আমারও আর অন্য প্রশ্ন মনে এল না। শুধু এটুকুই ভাবলাম, এ দেশের culture আমাদের থেকে অনেকটাই আলাদা। আমাদের দেশে পড়ুয়া ছেলে-মেয়েরা হয়তো চেনামুখের সামনে নিজদেশে এমন কাজে উৎসাহ প্রকাশ করবে না। 
সময় বদলাচ্ছে, আমার দেখা বদলাচ্ছে ....... পৃথিবীর বেঁচে থাকার নিয়মও হয়তো বদলে যাচ্ছে ঘরে-বাইরে, কতটা নজরে পড়ছে, আর কতটা অনুধাবন করতে পারছি ..... জানি না..........

রেস্তোরাঁ থেকে বেরিয়ে একলাই হাঁটছি বিচের রাস্তা ধরে। যেখানে আমাদের গাড়িটা পার্ক করা আছে, সেই অভিমুখে। আমেরিকার সাঁঝবেলা - সুদৃশ্য বহুতলগুলোতে বিজলীর চমক। আনমনে রাস্তা পার হতে গিয়ে দেখি, প্রায় ২০০ গজ দূরে একটা গাড়ি সজোরে ব্রেক কষল। 

হকচকিয়ে গেলাম। শব্দটা কানে পৌঁছতেই তাকিয়ে দেখি চালকমশাই হাতের ইশারায় আমায় রাস্তা পার হতে বলছেন। তার সঙ্গে আমার দূরত্ব ২০০ গজের মত, আর তার পিছনে আসা অন্যান্য গাড়িও নিরাপদ দূরত্বে গতি রুদ্ধ করল। এমন পরিমিত সভ্যতা-সৌজন্যে আমি কেমন হতবাক হয়ে পড়লাম, ভারি রাগ হল নিজের ওপর এই আনমনা পদক্ষেপের জন্য। দেখছি দেশজ ঢিলেঢালামি বিদেশে বিপদের কারণ হতে পারে - নিজেকে অনেক পরিমার্জিত করতে হবে। আমার কারণে অন্যের ক্ষতি সইতে পারব না। 
ডঃ গুহ'র বললেন, 'এখানে কোন গাড়ি যদি accident করে, সঙ্গে সঙ্গে পুলিশ ঘাড়ে নিঃশ্বাস ফেলবে। গাড়ির মালিকের নিঃশ্বাস শেষবারের মতো বেরিয়েও যেতে পারে যদি accident-এর ফলাফল মারাত্মক হয়ে থাকে'। 
একটা কথা স্বীকার করতেই হয়, এখানে এসে পর্যন্ত দেখছি, এই সাংস্কৃতিক সংস্থার প্রায় প্রত্যেকে তাদের মার্জিত রুচি ও সৌজন্যে আমাদের খুব কাছের মানুষ হয়ে পড়েছেন। আর আমার প্রতি এনাদের অতি সচেতনতা ও বিশেষ সম্ভ্রম এখনো পর্যন্ত আমাকে বেশ বিহ্বল করে ফেলেছে। আমি যতদূর বুঝি বা বিশ্বাস করি, ঘরে ঘরে ইন্টারনেট-এর আজকের এই যুগান্তকারী পদক্ষেপ সত্ত্বেও আমার মঞ্চ ও টেলিভিশনে করা কাজ যে নিয়মিতভাবে এনাদের বেডরুমের সাথী হয়েছে, তা নিশ্চই নয়। আর এও জানি, আমার নিজস্ব কাজের ব্যক্তিগত সংরক্ষণে আমার চরম উদাসীনতাও হয়তো এর অন্যতম কারণ। তবু আমার প্রতি এঁদের বিশেষ দৃষ্টি আমাকে এঁদের প্রতি যেমন শ্রদ্ধাশীল করে তুলেছে, তেমনই ভেতরে ভেতরে এক অভিনব চ্যালেঞ্জ অনুভব করছি যে এখানে সময় যেভাবেই কাটুক না কেন, আমার কাছে পাখির চোখ ওই অনুষ্ঠান। যার জন্যে আমার এখানে আসা। আমার খুব কাছের বন্ধু নচিকেতার গানের একটা লাইন মনে পড়ছে -'যেভাবেই তুমি সকাল দেখো, সূর্য কিন্তু একটাই'। সুতরাং প্রবাসে ক্যালেন্ডারের তারিখ যেভাবেই বদলাক না কেন, সূর্যের আলোর তেজ কমলে চলবে না। স্ক্রিপ্ট-টা এখনো পুরো গোছানো হয় নি। আজ রাতে অনেকটা কাজ করবো এমনটা  ভেবে রেখেছি। 

আজ চলি, কারণ সারাদিনে নানা ঘটনার ঘনঘটায় একটু ক্লান্তি এসেছে, তাই আজ এই পর্যন্তই ...............

সাগরপারের ডায়েরি/তপন বসু/পৃষ্ঠা-১৪/চলবে ..........

'সাগরপারের  ডায়েরি'র পর্ব-১৫ পড়তে চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

'সাগরপারের  ডায়েরি'র ১ম পর্ব পড়তে চাইলে এখানে ক্লিক করুন। 

©tapan basu. all rights reserved.
Picture Courtesy > self 

Comments

Popular posts from this blog

তপনের ডায়েরি ৭ / ৩১ আগস্ট ২০২১

তপনের ডায়েরি ৫ / ৫ আগস্ট ২০২১

স্টেরয়েড ছোট গল্প রচনা : তপন বসু