সাগরপারের ডায়েরি (পর্ব-১৩) | Sagarparer Diary (Episode-13)
সাগরপারের ডায়েরি
পর্ব-১৩
আজকের প্রসঙ্গ : সী-বিচের ধারে জলপানের বিরতি
সত্যি ! খিদেটা বেশ চাগাড় দিয়ে উঠেছে।
এমন পরিবেশে সমুদ্রের স্নিগ্ধ হাওয়ায় হাতে "American Fast Food" না থাকলে কোন বাঙালিকে কি আর মানায়! আরেকবার পার্থবাবুর অনুভবী মনের প্রশংসা না করে পারলাম না।
খুবই আশ্চর্য হলাম "Food Parlour'-এ এসে। ঝাঁ-চকচকে দোকানগুলো লাইন দিয়ে দাঁড়িয়ে এক বহুতলের একতলায়। চওড়া ফুটপাথে তাদের রকমারি খাবারের বর্ধিত বিপণন। পিতলের শিকল অথবা রঙিন ফুলের টব দিয়ে সৃষ্ট বিভাজন রেখা বুঝিয়ে দিচ্ছে কোন ফুটপাথ কোন দোকানদারের দখলে। তবে অহেতুক হাত ধরে টানাটানি নেই। 'দিদি', 'ও বৌদি' এদিকে আসুন বলে আন্তরিক আহ্বানও অদৃশ্য। 'মালিক'দের জোর করে 'মাল' গছানোর কোন তাগিদ নেই, তাই ক্রেতাদেরও মানসিক চাপ নেই বললেই চলে। যত্ন করে নিয়ম তৈরী করা, আর আরও যত্নের সঙ্গে তাকে মেনে চলা - যতই দেখি ততই ভালো লাগে - 'আমার সকল রসের ধারা' বোধ হয় এখানেই সর্বহারা হয়ে ভারতে ফিরবে। বিতর্কের অবকাশ আছে, তবু বলব - কিছু ক্ষেত্রে আমাদের ভারতবাসীদের আরো শৃঙ্খলাপরায়ণ হওয়া প্রয়োজন।
ভারতে ফেরার কথা মনে আসতেই সেই মুহূর্তের আনন্দ, অনুভূতি এক লহমায় মুছে গিয়ে মন পৌঁছে গেল চিরকালীন সুখের দোরগোড়ায় - যেখানে আমার বাড়ি। চোখের সামনে ভেসে উঠতে লাগল প্রিয়জনের পরিচিত মুখ। তাদের চাহনিতে আমার উদ্দেশে পাঠানো স্নেহের বার্তা। আমার তীব্র রসানুভূতি তো এই মানুষগুলোর জন্যেই বিকশিত। তাদের আশীর্বাদ, সহানুভূতি, শুভেচ্ছা ছাড়া যে এক পা'ও এগোনো যেত না !
এবার পার্থবাবুর ডাকে দু'পা এগোলাম, সামনের এক দোকানের দিকে। হরেক রকমের পেস্ট্রি, চকোলেট, বার্গার ও মৃত মুরগির স্তুপের মধ্যে থেকে নিজের খাবারটি সংগ্রহ করতে হবে। কেলেঙ্কারির এক শেষ। মোহনদা বললেন,'তপন ভায়া, কি নেবে' ? ভাবলাম, আমি কি আর নেবার মালিক ? যিনি এই আমন্ত্রনের ডিলার ও যাঁর পকেটে ডলার, তিনি ভাবলেই তো ল্যাঠা চুকে যায় ! মোহনদার অভিজ্ঞ চোখ বুঝল, আমি অর্ধেক খাবারেরই নাম জানি না। আপনাদের চুপি চুপি জানিয়ে রাখি, সংগীতের রস-আস্বাদনে এতটাই আহ্লাদিত থেকেছি সারাজীবন যে, রসনা-পূর্তির মুহূর্তে খাদ্যের নামকরণের পিছনে সময় দেবার প্রয়োজন বোধ করি নি।
চিকেনের দু-তিন রকমের সুস্বাদু আয়োজন, সঙ্গে আলুভাজা ও কফি সহযোগে আমাদের উদরপূর্তি ভালোই হল। খাবার পরিবেশন করলো আমেরিকার কুড়ি-ছোয়াঁ কলেজ পড়ুয়া মেয়েরা - এদের মধ্যে যে কোন কেউই আমাদের টিভি চ্যানেলে সংবাদপাঠিকা হিসেবে বসে যেতে পারে। শুধু নিউজের বিষয়বস্তু একটু দেখেশুনে বাতলে দিতে হবে। নইলে ঘণ্টাখানেক সঙ্গে থেকে একই নিউজের ক্রমপরিক্রমায় এরা ক্লান্ত হয়ে মনোমোহিনী কোন নামের পরিবর্তে 'বিল'-দের নাম জড়িয়ে ফেলতে পারে - সেক্ষেত্রে মিঃ ক্লিন, টন বা গেট্স-এর খবরে দর্শকের 'বিল' অকারণ বাড়বে।
তরিবাদ করে খাদ্যরসে নিমজ্জিত মনে বেশ কিছু প্রশ্নের উদয় হল। কিন্তু তার উত্তর পেলাম কি ? তোলা রইলো পরের পর্বের জন্য। আজ এই পর্যন্তই .........
'সাগরপারের ডায়েরি'র পর্ব-১৪ পড়তে চাইলে এখানে ক্লিক করুন।
'সাগরপারের ডায়েরি'র ১ম পর্ব পড়তে চাইলে এখানে ক্লিক করুন।
সত্যি ! খিদেটা বেশ চাগাড় দিয়ে উঠেছে।
এমন পরিবেশে সমুদ্রের স্নিগ্ধ হাওয়ায় হাতে "American Fast Food" না থাকলে কোন বাঙালিকে কি আর মানায়! আরেকবার পার্থবাবুর অনুভবী মনের প্রশংসা না করে পারলাম না।

ভারতে ফেরার কথা মনে আসতেই সেই মুহূর্তের আনন্দ, অনুভূতি এক লহমায় মুছে গিয়ে মন পৌঁছে গেল চিরকালীন সুখের দোরগোড়ায় - যেখানে আমার বাড়ি। চোখের সামনে ভেসে উঠতে লাগল প্রিয়জনের পরিচিত মুখ। তাদের চাহনিতে আমার উদ্দেশে পাঠানো স্নেহের বার্তা। আমার তীব্র রসানুভূতি তো এই মানুষগুলোর জন্যেই বিকশিত। তাদের আশীর্বাদ, সহানুভূতি, শুভেচ্ছা ছাড়া যে এক পা'ও এগোনো যেত না !
এবার পার্থবাবুর ডাকে দু'পা এগোলাম, সামনের এক দোকানের দিকে। হরেক রকমের পেস্ট্রি, চকোলেট, বার্গার ও মৃত মুরগির স্তুপের মধ্যে থেকে নিজের খাবারটি সংগ্রহ করতে হবে। কেলেঙ্কারির এক শেষ। মোহনদা বললেন,'তপন ভায়া, কি নেবে' ? ভাবলাম, আমি কি আর নেবার মালিক ? যিনি এই আমন্ত্রনের ডিলার ও যাঁর পকেটে ডলার, তিনি ভাবলেই তো ল্যাঠা চুকে যায় ! মোহনদার অভিজ্ঞ চোখ বুঝল, আমি অর্ধেক খাবারেরই নাম জানি না। আপনাদের চুপি চুপি জানিয়ে রাখি, সংগীতের রস-আস্বাদনে এতটাই আহ্লাদিত থেকেছি সারাজীবন যে, রসনা-পূর্তির মুহূর্তে খাদ্যের নামকরণের পিছনে সময় দেবার প্রয়োজন বোধ করি নি।
চিকেনের দু-তিন রকমের সুস্বাদু আয়োজন, সঙ্গে আলুভাজা ও কফি সহযোগে আমাদের উদরপূর্তি ভালোই হল। খাবার পরিবেশন করলো আমেরিকার কুড়ি-ছোয়াঁ কলেজ পড়ুয়া মেয়েরা - এদের মধ্যে যে কোন কেউই আমাদের টিভি চ্যানেলে সংবাদপাঠিকা হিসেবে বসে যেতে পারে। শুধু নিউজের বিষয়বস্তু একটু দেখেশুনে বাতলে দিতে হবে। নইলে ঘণ্টাখানেক সঙ্গে থেকে একই নিউজের ক্রমপরিক্রমায় এরা ক্লান্ত হয়ে মনোমোহিনী কোন নামের পরিবর্তে 'বিল'-দের নাম জড়িয়ে ফেলতে পারে - সেক্ষেত্রে মিঃ ক্লিন, টন বা গেট্স-এর খবরে দর্শকের 'বিল' অকারণ বাড়বে।
তরিবাদ করে খাদ্যরসে নিমজ্জিত মনে বেশ কিছু প্রশ্নের উদয় হল। কিন্তু তার উত্তর পেলাম কি ? তোলা রইলো পরের পর্বের জন্য। আজ এই পর্যন্তই .........
সাগরপারের ডায়েরি/তপন বসু/পৃষ্ঠা-১৩/চলবে ..........
'সাগরপারের ডায়েরি'র পর্ব-১৪ পড়তে চাইলে এখানে ক্লিক করুন।
'সাগরপারের ডায়েরি'র ১ম পর্ব পড়তে চাইলে এখানে ক্লিক করুন।
©tapan basu. all rights reserved.
Picture Courtesy > sprudge
Comments
Post a Comment