বড়ো বিস্ময় জাগে (পর্ব-৬) | Baro Bismay Jaage (Episode-6)
বড়ো বিস্ময় জাগে
পর্ব-৬
শান্তিনিকেতন থেকে, শেষবারের মত ....... |
বয়স তখন ৭৯ - সাল ১৯৪০। কবি কি শুনতে পাচ্ছিলেন তাঁর আহ্বান ? "জীবন-মরণের সীমানা ছাড়ায়ে, বন্ধু হে আমার" .....
অনেক বন্ধুর দেখা পেয়েছেন, 'বন্ধুর' কৃত্রিম-অকৃত্রিম ভালোবাসাতেও খামতি ঘটে নি। 'বন্ধুর' পথ অতিক্রম করেছেন নিজের সর্বশক্তি দিয়ে - নিজেকে বাঁচিয়ে রাখার জন্যে - আসলে তা আমাদেরই বাঁচিয়ে রাখতে। কিন্তু কতদিন ?
শরীর যে আর প্রশ্রয় দিতে চায় না। চিকিৎসকের বারণ সত্ত্বেও চললেন কালিম্পঙ - কবির অত্যন্ত প্রিয় জায়গা। মন চাইলেও শরীর মানলো না। গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় ফিরলেন কলকাতায়। কিন্তু তাঁর সাধের শান্তিনিকেতন ? ২৯শে নভেম্বর শান্তিনিকেতন পৌঁছলেন।
Rare Photo-Last Journey-25th July 1941 |
আশ্রম ত্যাগ করলেন শেষবারের মতো। অগণিত অনুরাগীর ভিড়ে কবির মন দ্বিধাবিভক্ত - আর কি ফিরবেন আপনার চেয়েও প্রিয় শান্তিনিকেতনে ?
"যেতে যেতে চায় না যেতে, ফিরে ফিরে চায়"
দৃষ্টিপথ ক্রমশ ঝাপসা হয়ে আসছে - জনসমুদ্রের মাঝ দিয়ে অপসৃয়মান গাড়ি থেকে শত শত হাত - আর স্পষ্ট দেখা যায় না।
"আবেশভরে ধুলায় প'ড়ে কতই করে ছল,
যখন বেলা যাবে চলে ফেলবে আঁখিজল "।
মন পৌঁছে গেছে ইতহাসের প্রথম পাতায় - মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথের হাত ধরে বালক রবির প্রথম বোলপুর দর্শন। তখন বয়স কতই বা? এই ১১ কি ১২। হয়তো তখনই বালক রবির মনে আজকের শান্তিনিকেতনের ছবি স্পষ্ট হয়ে গিয়ে থাকবে।
'সাধারণ' আর 'অসাধারণে'র তফাৎ এই যে - সাধারণ অক্সিজেন গ্রহণ করে, এটুকুমাত্র জেনে যে এই অক্সিজেন তাকে বাঁচিয়ে রাখে। আর অসাধারণ এই অক্সিজেন যে গ্রহণ করতে পারছে তার জন্যে ঈশ্বর ও তাঁর সৃষ্ট প্রকৃতি তথা বায়ুমণ্ডলকে নীরবে প্রণাম জানায়। এও এক 'দর্শন' - না, philosophy নয়, এ হলো অক্সিজেনকে রক্ত সঞ্চালনের মধ্য দিয়ে মস্তিষ্কের ঘুমিয়ে থাকা কোষকে জাগ্রত ও আয়ত্ত করা। তাই ঘুমিয়ে দেখা স্বপ্নকে জাগরণে বাস্তবে পরিণত করতে পারাটা সবার দ্বারা সম্ভব হয় না। যিনি পারেন, তিনি যে সাধারণের সীমানা পেরোবেন তাতে আর আশ্চর্য কি ?
একটি প্রচলিত কথা মনে পড়ছে, "Dream is not, which you have while sleeping; but, dream is the ONE, which doesn't let you sleep".
একটি প্রচলিত কথা মনে পড়ছে, "Dream is not, which you have while sleeping; but, dream is the ONE, which doesn't let you sleep".
রবিঠাকুরের জীবন প্রবাহে বিস্মিত হবার উপকরণ অনেক। তাঁর পরবর্তী কালে রবীন্দ্র-অনুরাগীরা সেই উপাদানে নানা ভাবে সিঞ্চিত হয়েছেন।
আমিও তাঁর গান ও জীবন নিয়ে যতটুকু জেনেছি, আমার আগ্রহ ও বিস্ময় ক্রমশ বেড়েছে - যা আমি তুলে ধরবার চেষ্টা করছি আমার এই ব্যক্তিগত কলমে। এর কৃতিত্ব তাঁরই, যিনি আমায় অনুপ্রাণিত করেছেন এমন দুরূহ কাজে।
"আমার বাঁশি তোমার হাতে ফুটোর পরে ফুটো তাতে -
তাই শুনি সুর এমন মধুর পরান-ভরানো ।
তোমার হাওয়া যখন জাগে আমার পালে বাধা লাগে -
এমন করে গা'য়ে পড়ে সাগর তরানো" ।
আজ এই পর্যন্ত - আবার দেখা হবে পরের পর্বে ..........
বড়ো বিস্ময় জাগে/তপন বসু/পৃষ্ঠা-৬/চলবে ..........
'বড়ো বিস্ময় জাগে'র পরের পর্ব (৭) পড়তে চাইলে এখানে ক্লিক করুন।
'বড়ো বিস্ময় জাগে'র ১ম পর্ব পড়তে চাইলে এখানে ক্লিক করুন।
©tapan basu. all rights reserved.
Picture Courtesy > scroll / vinod kothari@rareNvintage / Visva-Bharati Instagram
'বড়ো বিস্ময় জাগে' - এই ধারাবাহিক আসলে আমার লেখনী-প্রচেষ্টা, প্রবীণ বয়সের রবিঠাকুরের চোখ দিয়ে তাঁর বিশাল-বিস্তরিত জীবনের টুকরো টুকরো ছবি। অবশ্যই আমার দৃষ্টিতে। '(তোমার) চোখের আলোয় দেখেছিলেম চোখের বাহিরে'। এই প্রবাহের পঞ্চম পর্ব পর্যন্ত আপনারা পড়েছেন। তারপর কিছুদিন এই লেখা স্থগিত ছিল, কারণ আরেকটি ধারাবাহিক "সাগরপারের ডায়েরি"ও পাশাপাশি চলছিল। সে লেখা সম্পূর্ণ হয়েছে ও আমার ব্লগ'এ আগ্রহীরা পড়ে ফেলেছেন। এবার অসম্পূর্ণ 'বড়ো বিস্ময় জাগে' এগিয়ে চলবে - আজ থেকে আবার। মাঝে মধ্যে অন্যান্য প্রাসঙ্গিক কবিতা বা গান বা গল্প হয়তো জায়গা পাবে, তবে কোন ধারাবাহিক নিশ্চই নয়।
ReplyDeleteআজ রইলো "বড়ো বিস্ময় জাগে"র ষষ্ঠ (৬) পর্ব।