সবুজদ্বীপের ডায়েরি (আন্দামান পর্ব-১০) | Sobujdweeper Diary Ep#10


সবুজদ্বীপের ডায়েরি । আন্দামান পর্ব-১০
সবুজদ্বীপের ডায়েরি । 29th February 2020 । ভোর  ৫টা ........


সঞ্জয় 'বেড টি' দিতে এল। ঘুমটা বেশ জব্বর হয়েছে। চায়ের কাপে
 চুমুক দিতে দিতে মনে হল কালকের বাকি অভিজ্ঞতাটুকু লিখেই ফেলি। আগামীকালই তো ফেরার পালা। আজকের বেড়ানোর কাহিনীও তো লিখে ফেলতে হবে এরই মধ্যে। ডায়েরি নিয়ে বসলাম................. 

ডানদিকে জারোয়াদের দ্বীপ আর বাঁহাতে ম্যানগ্রোভের জঙ্গল পার করে ছোট স্পিড বোট একটা খাঁড়ির মধ্যে নোঙ্গর করল। স্পিড বোট থেকে নেমে পা রাখতে হবে একটু উঁচু গাছের গুঁড়ি দিয়ে তৈরী সিঁড়ির ধাপে। ঠিক সেখান থেকেই শুরু হয়েছে দু'প্রান্তে বাঁধা সরু দড়ি ও কাঠের তৈরী একটা সাঁকো। নিচে কুলকুল করে বয়ে চলা backwater-এর ছোট্ট বিভাজিকা। এলোমেলো পাথর, নুয়ে পড়া গাছের সবুজ কলি। আর অদৃশ্য পাখির কল-কাকলি। মনে হচ্ছে সাঁকোতেই দাঁড়াই কিছুক্ষণ। প্রকৃতি এতো অপরূপ কেমন করে হয় ! মোবাইল ক্যামেরায় বেশ কয়েকটি বাহারি ছবি তুলে সাঁকো পেরিয়ে সামনের সমতলে পড়লাম। বাঁদিকে বোর্ডের লেখায় চোখ পড়ল - ১.২ কিমি দূরত্বে Lime Stone Cave - আমাদের আজকের দ্রষ্টব্য। বেশ একটা এক্সপেডিশনে যাবার মতো পরিস্থিতি। সরু রাস্তার দু'পাশে কোথাও ঘন জঙ্গল, আবার একটু এগিয়ে খোলা জমি - পরিচ্ছন্ন আকাশ সামিয়ানা পেতেছে। প্রাচীন বৃক্ষের শিকড় মাটির ওপর দিয়েই উঁচু হয়ে তাদের বয়স ও উপস্থিতির জানান দিচ্ছে - অসাবধান হলেই চোট পাবার সম্ভাবনা। 

বলতে বলতেই চ্যাটার্জীদার কিশোরী মেয়েটি গাছের শিকড়ে পা আটকে ঝুপুস হল মাটিতে। ভাগ্যিস ! তেমন কোন গুরুতর আঘাত লাগে নি। অনেকদিন বাদে কাউকে মাটিতে গড়াগড়ি খেতে দেখলাম, শহর কলকাতায় খোলা মাটির এত অভাব ! চ্যাটার্জীদার মেয়ের মুখ দেখে মনে হল না যে সে এই পদস্খলনে আদৌ অপ্রস্তুত হয়েছে, বরং এমন ধরাতলে ধরাশায়ী হতে পেরে একটা খুশি-খুশি ভাব চোখে-মুখে ফুটে উঠেছে। সে বেশ নিশ্চিত যে এই আনন্দ কারোর সঙ্গে ভাগ করতে হবে না, স্ব-ইচ্ছায় কেউ এভাবে পড়ে যেতে চাইবে না। 

এখানে বোট থেকে নামার পর একটি ছোট ছেলে আমাদের গাইড, পথপ্রদর্শক। আমাদের ম্যানেজারও এদের কাছে দর্শনার্থী, যদিও অচেনা নয়। আর বাকি গাইডরাও অল্প-বয়সী। বুঝলাম, এখানে ঘুরিয়ে দেখানোটা এদের 'বাবার সম্পত্তি' - পরম্পরায় পারিবারিক উপার্জনের সরকারি স্বীকৃতি 

গলা শুকিয়ে কাঠ আমাদের - সময় বেলা ১১টা। সূর্যদেবের প্রখর তেজে মাথা অল্প-বিস্তর গরম। সামনেই আধা-রাস্তা পার হবার পর দু'টি শরবতের দোকান - নিম্বু-পানি। কুড়ি টাকা প্রতি গ্লাস লেবুর শরবত - আমাদের জন্যে সঞ্জীবনী সুধা। একটু চাঙ্গা হয়ে নেওয়া গেল। লেবুর শরবত খেয়ে নতুন ভাবে উৎসাহিত হয়ে আমার স্ত্রী স্বপ্না গলার ওড়না কোমরে কষে বেঁধে নিল, বাকি পথ পাড়ি দিতে। আরো বেশ খানিকটা চড়াই-উৎরাই পার করে পৌঁছলাম গুহামুখে। 

'গুহা' শব্দটার মধ্যে কোথাও বোধ করি আদিম ও অকৃত্রিম এক রোমাঞ্চের গন্ধ আছে। তাকে যথার্থ মর্যাদা দিতে সেই কচি বয়সের গাইড দু'হাত তুলে আমাদের আর এগোতে বারণ করল - সে কিছু বলতে চায়। আমিও সে কথা পাঠকদের জানাতে চাই, তবে আজ নয়, আগামী শুক্রবার, পরের পর্বে। 

চলবে .....

আন্দামান ভ্রমণের প্রথম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক করুন
পরের পর্বের জন্য এখানে ক্লিক করুন।  
©tapanbasu
photo courtesy : tapanbasu(author)/oyo/tripadisors

Comments

Popular posts from this blog

তপনের ডায়েরি ৭ / ৩১ আগস্ট ২০২১

তপনের ডায়েরি ৫ / ৫ আগস্ট ২০২১

স্টেরয়েড ছোট গল্প রচনা : তপন বসু