একটু ভেবে দেখুন(পর্ব ৯)-ট্রাফিক সিগন্যাল | Ektu Bhebe Dekhun Ep#9
একটু ভেবে দেখুন
পর্ব ৯
আজকের পর্ব - ট্রাফিক সিগন্যাল


কিন্তু আজ একটু জেদ চেপে গেল - কারণ আমি জানি ওই Green Signal, Yellow থেকে Red হবার মধ্যে সময়ের ব্যবধান বড়জোর তিন থেকে পাঁচ সেকেন্ড, তার মধ্যে গাড়ি-হীন ফাঁকা রাস্তা ছাড়া একটা ৩০-৪০ ফুটের ক্রসিং পার হওয়া সম্ভব নয় । এবং মজা হলো, রাজ্যের যত পুলিশি তৎপরতা ঠিক ঐখানেই। গাড়িটা তখনি পার্ক না করে একটু এগিয়ে গেলাম। সেই পুলিশ গার্ড আমার পাশে পাশে চলেছে। বিরক্তি দেখিয়ে প্রশ্ন করলাম - 'দাঁড় করালেন কেন'? কড়া উত্তর - 'যা বলবার ওই ওখানে ট্রাফিক সার্জেণ্টকে গিয়ে বলুন'। ভিতরে ভিতরে একটু ক্ষুব্ধ হচ্ছি - বেশ বুঝতে পারছি। এদের ব্যবহার এমনই যেন সাংঘাতিক কোন গুরুতর অপরাধ করে আমি পালিয়ে যাচ্ছি আর এরা সঠিক সময়ে আমাকে পাকড়াও করেছে। বললাম, 'আপনি সার্জেন্টকে বলুন, আমার প্রচন্ড ইমার্জেন্সি আছে, দাঁড়াবার সময় নেই'। আমি গাড়ি থেকে নামছি না এবং ট্রাফিক গার্ডের সঙ্গে কথোপকথন একটু লম্বা হচ্ছে দেখে রাস্তার ধারে অপেক্ষারত সার্জেন্টের অভিজ্ঞতার চোখ হয়তো বুঝল যে ব্যাপারটাকে আমি খুব সহজভাবে নিই নি। উনি নিজেই এগিয়ে এলেন এবং খুব রাশভারী ব্যক্তিত্বের সাথে আমার লাইসেন্সটি চাইলেন, কারণ আমি নাকি ট্রাফিক সিগন্যাল না মেনে গাড়ি চালিয়েছি।

আশ্চর্য হয়ে গেলাম এর পরের ঘটনায়। ট্রাফিক সার্জেন্ট হঠাৎ বিগলিত হয়ে আমাকে গাড়িতে উঠতে ইশারা করে বললেন, 'স্যার, এটা বাস্তব যে Yellow সিগন্যাল খুব কম সময়ের জন্যে থাকে। কিন্তু এতে আমার কিছু করার নেই। আপনি চলে যান, প্লিজ কিছু মাইন্ড করবেন না'।
আর কথা বাড়ালাম না। ওনাকে ধন্যবাদ জানালাম এই কারণে যে, উনি তাঁর অক্ষমতা স্বীকার করলেন - সত্যিটাকে উড়িয়ে না দিয়ে। আর এটাও বলে এলাম যে, বিশেষ তাড়া থাকলে একজন সচেতন নাগরিক এই অকারণ Harassment-এ কতটা অসুবিধেতে পড়তে পারে।
অভিজ্ঞতায় দেখেছি, কলকাতার বেশির ভাগ ট্রাফিক সিগনালে counter clock কাজ করে না। ফলে বোঝা যায় না, চলমান সিগন্যাল কতক্ষণ পরে লাল বা সবুজ হবে - তাহলে অন্ততঃ অকারণ হঠকারিতায় রাস্তার মোড় তড়িঘড়ি পার হবার প্রয়োজন পড়ত না। আমরা যারা নিয়মিত গাড়ি ড্রাইভ করি, তারা আন্দাজে বড়ো রাস্তার মোড় পার হই আর বহু ক্ষেত্রেই দেখি মাঝামাঝি পৌঁছোবার পর সবুজ সিগন্যাল হলুদ হয়ে লাল হয়েছে। এই অনিচ্ছাকৃত অপরাধ করবার বিন্দুমাত্র ইচ্ছে না থাকলেও নিজেকে দোষী বলে ধিক্কার দিতে সাধ জাগে। তদুপরি, এই হলুদ সিগন্যাল কোথাওই পনেরো কিংবা কুড়ি সেকেন্ড সময় দেয় না পুরো রাস্তা পার হতে, ফলে হঠাৎ ব্রেক কষে পিছনের গাড়ির সঙ্গে সংঘর্ষ এড়াবার মত কোন সুযোগ থাকে না, বড়োসড়ো দুর্ঘটনার পুরোদস্তুর একটা ভয় থেকে যায়।

নিয়ম এমন করে প্রতিষ্ঠা করা দরকার যে তা যেন আমরা মন থেকে মেনে চলতে পারি। আমার এই বক্তব্য ট্র্যাফিক ডিপার্টমেন্টের ওপর কোন ক্ষোভ প্রদর্শনের উদ্দেশ্যে নয়। কলকাতার ট্রাফিক ডিপার্টমেন্ট ভারতবর্ষের অনেক বড় শহরের তুলনায় যথেষ্ট ভাল। তবুও বলব, এইরকম অদ্ভুত কিছু নিয়মকানুনের বেড়াজালে আমরা প্রতিনিয়ত পিষ্ট হচ্ছি। একজন সচেতন নাগরিক হিসেবে সকলের ভালোর জন্যেই বিনয়ের সঙ্গে কলকাতার ট্রাফিক পুলিশ ডিপার্টমেন্টকে এ ব্যাপারে উপযুক্ত ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ জানাই।
একটু ভেবে দেখবেন !
"একটু ভেবে দেখুন"-এর বাকি পর্ব পড়তে চাইলে নিচে দেওয়া লিংক-এ ক্লিক করুন ।
image courtesy : (1)nacto (2)thehindu (3)livemint (4)pinterest
Comments
Post a Comment