টয়লেট (ছোট গল্প) রচয়িতা : তপন বসু
টয়লেট
(ছোট গল্প)
রচয়িতা : তপন বসু
‘খোকা ! একটু আয় না রে’ ! পাশের ঘর থেকে বাবার ডাক।
‘বড্ড জোর পেয়ে গেছে, একটু টয়লেটে নিয়ে যাবি’ ? বাবা আবার বলেন, এবার আর একটু গলা উঁচিয়ে।
‘আঃ ! দাঁড়াও না ! একটু চেপে রাখো ! হাতের কাজটা সেরেই যাচ্ছি' - ল্যাপটপে মগ্ন ছেলে বিরক্তি প্রকাশ করে, কর্তব্যকে অস্বীকার না করে।
অফিসে ফাইল পাঠিয়ে হাতের কাজ সেরে খোকা পাশের ঘরে যায়, বাবার কাছে - 'যাবে এখন' ?
বাবা বলেন, ‘তুই আর কি করবি ? এতো কাজের চাপ ! ডাকলেই তক্ষুনি কি আর আসা যায় ? চলে গেছে রে। আবার এলে বলব'।
- 'কি করি বল ? আমি যে একলা হাঁটতে পারি না রে তুই ছাড়া' - বাবা দীর্ঘশ্বাস ফেলেন।
বাবা-মা দুজনেই আশি পার, একজন অষ্টাশি, মা চুরাশি। এমনিতে সুস্থ, কিন্তু কাউকে না ধরে একলা হাঁটতে পারে না। আসলে পায়ের ব্যালেন্সটা গেছে।
আবার ডাক। খোকা নিজেই তখন টয়লেটে, সবে সিগারেটটা ধরিয়েছে - 'উফ ! এবার বেরোই কি করে'?
বাবা উৎকণ্ঠায় মা'কে জিজ্ঞেস করেন, 'হ্যাঁ গো, খোকা কি পাশের ঘরে নেই' ?
মা বললেন, 'কি জানি ? এই তো ফোনে কথা বলছিল শুনলাম'।
- 'খোকা, ও খোকা' ! বাবার ডাক বেশ কাতর শোনাল। বোধ হয় খুব জোরে পেয়েছে।
হঠাৎ ধুপ করে একটা শব্দ, কেউ যেন পড়ে গেছে। খোকা আর দেরি না করে সিগারেটটা কমোডে ফেলে গামছা পরেই একছুট্টে ওই ঘরে। দেখে বাবা মেঝেতে, মা তাঁকে তোলবার চেষ্টা করছে।
'খোকা, বড্ড জোর পেয়ে গেছিল রে, আর পারছিলাম না। তোকে ডেকে সাড়া না পেয়ে একা একাই' ..... বাবার কথা হঠাৎ থমকে যায়।
'বাবা, ও বাবা' - খোকা ডাকে ব্যাকুল হয়ে। ............
"এই খোকা, ওঠ, ওঠ ! আর কত বেলা অবধি ঘুমোবি বল তো ? আমি কোন আসানসোল থেকে চলে এলাম।
খোকার ঘুম যে আর ভাঙতেই চায় না। ঘুম জড়ানো চোখেই অনুভব করে বুড়িকে, তার বড়ো দিদি। খোকা হলো বুড়ির একমাত্র ছোট ভাই।
পাশ-বালিশটা আরো চেপে ধরে খোকা, 'কি রে ? তুই ? ক'টা বাজে'?
- "সাতটা। ওঠ এবার। মনে নেই ? আজ বাবা-মা'র বিয়ের তারিখ ? আমি সেই কোন ভোরে বেরিয়ে চলে এসেছি সারপ্রাইজ দিতে ! ৬১তে পা দিল, ভাবা যায়" ? - দিদির উত্তেজনা ঠিকরে বেরোচ্ছে ।
খোকার হুঁশ ফেরে। চোখে-মুখে জল দিয়ে দু'জনে মিলে চুপিচুপি যায় পাশের ঘরে - বাবা-মা তখন ঘুমোচ্ছে।
খোকা বলে, 'বুড়ি, আরেকটু ঘুমোতে দে না, এখনই ডাকবি' ? পিঠো-পিঠি ভাই-বোনের তুই-তোকারিটা বড় আপনার।
বুড়ি কথা শোনে না, 'চল তো ! অনেক ঘুমিয়েছে। ও বাপি, আরে ও মা ! ওঠো তো শিগগির ! অনেক ঘুমিয়েছ'।
মা'র ভোরের পাতলা ঘুম ভেঙে যায়, চোখ মেলেই ওদের দেখে বাবাকে ডাকে, 'এই ওঠো, দেখো কে এসেছে, বুড়ি, খোকা - ওরা কতক্ষণ ধরে ডাকছে '।
মা 'ওঠো' বলে আলতো ঠেলতেই বাবার শরীরটা গড়িয়ে সটান মাটিতে - চোখ স্থির, মুখটা প্রশান্ত। হাগিস পরা কোমরে সামান্য অনিয়ন্ত্রিত হলুদ রেখা। .......
খোকার সকালের অনিয়ন্ত্রিত দৃষ্টি তখনও আবেগের সঙ্গে মেলে নি ...... "এবার কিন্তু গায়ে জল ঢেলে দেব, কি ঘুম ঘুমোচ্ছে রে বাবা ! কখন থেকে ........ " ?
খোকার এক লহমায় ঘোর কাটে, কথার সাথেই। বুড়ির হাত ধরে তিন লাফে বাবা-মা'র ঘরে পৌঁছয়। দুজনেরই ছেড়ে দেওয়া শরীর, কেমন অদ্ভুতভাবে নিশ্চিন্ত।
খোকা বলে, "দাঁড়া, আমি দেখছি রে বুড়ি" বলে খোকাই বাবার গায়ে হালকা ছুঁয়ে বলে, 'বাপি' ?
'কি রে খোকা, উঠে পড়লি কেন এতো তাড়াতাড়ি ? আমি চেপে আছি রে, তোকে আর ডাকিনি। কত রাত অবধি কাজ করতে হয়, আমি জানি তো' ! তারপর বুড়ির দিকে তাকিয়ে বলে, 'বুড়ি, তুই ? এতো সকালে' ?
খোকার চোখের জল আর বাঁধ মানে না, বাবাকে জড়িয়ে ধরে বলে, 'আজ থেকে আর কোন কিছু চেপে রেখো না বাপি। অনেক হয়েছে, আমি Work from Home-এ আছি, তুমি ডাকলেই চলে আসব'।
গলার আওয়াজ পেয়ে এবার মা'ও উঠে পড়েছে, নিয়ন্ত্রণ ও আবেগ - দুই'কে সঙ্গী করেই।
বুড়ি আর খোকা বাবা-মাকে একসাথে জড়িয়ে ধরে - কতদিন পর।
হঠাৎ মা বলে ওঠে, 'Many Many Happy Returns of the Day' - এবার আমিই জানালাম, আমাদের সকলের জন্যে।
দেরিতে হলেও আবেগের ঘুম ভাঙে আজ, পৃথিবীর আলো দেখানো এই দু'টো মানুষের একষট্টিতম বিবাহবার্ষিকীতে সকাল হয় সাদা-কালোর দিনকে পিছনে রেখে। ছোটবেলার ছবিটাই ফিরে আসে বড়বেলার হাত ধরে, রঙিন হয়ে । আপনার চোখ যতটুকু রঙিন, ততটাই সুন্দর।
ভাগ্যিস ! কিছু স্বপ্ন সত্যি হয় না !!!
Egulo portam kosto petam tomar asukhe r ikhte parini Sudhui kanna peto je Tapanda.aj tumi kothay je gele na bola bani koto kichu je royei galo
ReplyDelete