মনে পড়ে-৩-পীযুষকান্তি সরকার | Mone Pore Ep#3

মনে পড়ে-৩
সংগীতকার শ্রী পীযুষকান্তি সরকার

সারেগামা ইন্ডিয়া লিমিটেড বা চেনা নামের HMV-র কর্পোরেট অফিস তখন এসপ্ল্যানেডে - ঠিক স্টেটসম্যান অফিসের বিপরীত ফুটপাথে। আমি তখন ব্যাঙ্কে চাকরি করি। সেদিন ছুটি নিয়েছি, কারণ HMV-তে একটা মিটিং আছে, গানবাজনার নতুন কয়েকটি প্রজেক্ট সংক্রান্ত। সময়ের একটু আগেই পৌঁছে গেছি, কারণটা ইচ্ছাকৃত। চওড়া কাঁচের দরজা ঠেলে ভিতরে ঢুকলেই যে আমার মত গানপিপাসুর স্বর্গসুখ। মস্ত বড় হলঘরের চারিদিকে শুধু গান আর গান। পুরোনো লং প্লে রেকর্ড সাজানো রয়েছে একদম ওপরের তাকে, সেগুলো HMV-র ঐতিহ্যের দিশারী। কে নেই সেখানে ? গওহরজান বাঈ থেকে আরম্ভ করে উস্তাদ বিসমিল্লাহ খান, পন্ডিত রবিশঙ্কর-আমজাদ আলি খাঁ সাহেবকে ডান হাতে রেখে অর্ধবৃত্তের শেষ অর্ধে উস্তাদ জাকির হুসেন থেকে পন্ডিত অজয় চক্রবর্তী। তার ঠিক নিচের তাকে সত্যজিৎ রায়ের গুগা-বাবা, পঙ্কজ কুমার মল্লিকের মহিষাসুরমর্দিনী, রবীন্দ্রনাথের শ্যামা - চোখকে পরমার্থের সন্ধান দিয়ে মনকে সংযমে রাখা। ডানদিকে-বাঁদিকে অন্যান্য নানা আকারের সেল্ফ - সমস্ত নতুন রেকর্ড-ক্যাসেট সেই অংশে দৃশ্যমান। যে কোন সংগীতপিপাসুর এখানে সময় কাটানোটা পৃথিবীর সবচেয়ে ক্লান্তিহীন সহজ কাজ। হঠাৎ বাঁদিকে দেখি পীযুষদা - শ্রী পীযুষকান্তি সরকার। তিনিও ওই গান-সম্ভারে নিমজ্জিত। দুজনে দেখা হল। আমি জানালাম এখানে আসবার কারণ। 

পীযুষদা বললেন, 'আমারও একটা মিটিং রয়েছে তপন, আমার আসছে নতুন রেকর্ডের ব্যাপারে, তুমি থাকলে আমার তো অসুবিধেই নেই। চলো, মিটিংটা আগে সেরে আসি। তোমার এখানে এর পরে বিশেষ কোন কাজ আছে নাকি' ? বুঝলাম পীযুষদা কথা বলার মুডে আছেন। আমারও ধরা দিতে কোনই আপত্তি নেই। Saregama HMV-র সর্বোচ্চ কর্তার ঘরটি হলের ঠিক মধ্যিখানে দিয়ে বাঁকানো সিঁড়ির শেষ মাথায়। মিটিং শেষ হতে ঘন্টাখানেক পার হলো। চা-জলযোগ উদরস্থ না করে HMV-র কোন আঞ্চলিক প্রধানের থেকে এ যাবৎ কোনদিনই ছাড়া পাইনি।  সেই মিঃ সুব্রত চৌধুরী থেকে মিঃ করিম, মধ্যিখানে মিঃ জে এস গুপ্ত - আজও HMVতে তাঁদের বর্তমান অফিসে গেলে কত গান, সঙ্গে অবাক জলপান ! তাঁদের সম্প্রীতির বদান্যতার প্রথায় সেদিনও কোন অন্যথা হলো না। জলযোগ-শেষে নিচের হলেই ওই গান-সীমানার কেন্দ্রস্থলেই আমি আর পীযুষদা বসে পড়লাম।

পীযুষদা শুরুতেই একেবারে গান নিয়ে। সরাসরি ঢুকে পড়লেন 'ভুবনজোড়া আসনখানি' ও 'পিনাকেতে লাগে টঙ্কার' -  তাঁর অত্যন্ত প্রিয় এই দু'টি গান-অন্তরের আভিজাত্য নিয়ে। সম্ভবতঃ ওই দুটি গান তাঁর মাথায় ঘুরছে অপেক্ষমান রেকর্ডের জন্যে। প্রসঙ্গত, লাইভ অনুষ্ঠানে 'পিনাকেতে লাগে টঙ্কার' আমি পীযুষদার থেকে আর কারো কন্ঠে বেশি ভাল শুনেছি বলে মনে পড়ে না। এই গানটি যখন তিনি শুরু করতেন, লক্ষ্য করতাম 'কম্পন জাগে শঙ্কার' - এই লাইনটি বলতে গিয়ে পীযুষদা এক অন্য জগতে পৌঁছে যেতেন। 'শঙ্কার' শব্দটির অনুরণন প্রেক্ষাগৃহের এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে ঘুরে বেড়াত প্রতিটি শ্রোতার অন্তর ছুঁয়ে। আর শ্রোতারা মুগ্ধ বিস্ময়ে শুনতেন, পীযুষদা আবার গানের মুখে ফিরে আসছেন ওই উদাত্ত উচ্চারণের বাতাবরণ থেকে, এক অন্য Intonation কে কণ্ঠে নিয়ে। হ্যাঁ, এই Intonation - পীযুষদা বলে চললেন, একটা শব্দ নিয়ে রবীন্দ্রনাথ কি খেলা খেলেছেন দেখ। পীযুষদা জানতেন আমি বহুদিন ধরে রবীন্দ্রসংগীত শেখবার চেষ্টা করছি শ্রী দ্বিজেন মুখোপাধ্যায়ের কাছে। তাই হয়তো আরেকটু ডিটেইল-এ পৌঁছতে চাইলেন। আমাকে বললেন, 'তুমি বজ্রপাতকে মেঘমল্লারে বাঁধতে পারবে তপন' ? উত্তর দুজনেরই জানা। বললেন, 'হ্যাঁ, রবীন্দ্রনাথ তাই করলেন। উনি যা চাইবেন তাই করবেন, আর যা চাইবেন না, তাও হয়ে যাবে যখন উনি নিজের লেখায় সুর বসাবেন - কারণ তিনি The Tagore ...... 

এই 'টেগোর' শব্দটা এমন করে জোরাল কণ্ঠে বললেন যে আমার মনে হলো উনি বোধ হয় লাইভ অনুষ্ঠানে গান শুরু করেছেন। পিনাকেতে টঙ্কার লাগলে বসুন্ধরা ভয় পাবে - কিন্তু পালিয়ে যাবে কি? এমন করেই নাকি ওই 'শঙ্কার' শব্দটি উচ্চারণ করতে হবে। এবং গানের প্রথম লাইনে টঙ্কার আর দ্বিতীয় লাইনে শঙ্কার, এই দুই ক্ষেত্রে Voice Intonation আলাদা হতে হবে। সেই কারণেই নাকি রবিঠাকুর ওখানে শঙ্কার সুরে এমন এক প্রলম্বিত আন্দোলন রেখেছেন - Effect of emotion through music in reality. পীযুষদার মুখে ওই Intonation ও Articulation - এই শব্দ দুটি অনেকবার শুনেছি। গানের উচ্চারণের ক্ষেত্রে এই দুই আভিধানিক অর্থ কণ্ঠে ঠিকমত পরিমিতিতে বসাতে না পারলে নাকি গানের চেহারাই ফুটে বেরোনো সম্ভব নয়। মাঝে-মধ্যে সুরের মাধ্যমে সেই শব্দের অর্থ আমাকে বুঝিয়ে দিতে লাগলেন, উদাহরণ সহযোগে। ভাবছিলাম, একজন শিল্পী যখন তাঁর শিল্পের রসে ডুবে থাকেন, তখন তাঁর কাছে বোধ হয় পৃথিবীর যে কোন প্রান্তরই আপনার নিজস্ব - বাহ্যিক সংযম তখন বশে থাকে না। আমার চোখের সামনে ওই মুহূর্তে তাকে সাজানো রেকর্ডগুলোর ভেতর দিয়ে সংগীতের সুরগুলো জীবন পেয়ে যেন নড়েচড়ে বেড়াতে লাগল। দুপুরে শুরু হওয়া সাংগীতিক আড্ডা যখন ডালপালা ছুঁয়ে শিকড়ের দিকে নামতে শুরু করেছে, আমাদের দুজনেরই হুঁশ ফিরল - ঘড়ির কাঁটা তখন সন্ধ্যায় ঢলেছে। এই আদান-প্রদানে আমি যতটা ঋদ্ধ হয়েছি, আমার নির্বাক নিভৃত শ্রোতার হৃদয় তার চাইতেও বেশি পরিপূর্ণতা পেয়েছে। দিনের সাথে সাথে নিজেরাও বিদায় নিলাম ওই সুরেলা পরিবেশ থেকে। কিন্তু গন্ধটা রয়ে গেল বহুদিন। 

গত ৩০শে জুলাই ছিল এই অসামান্য জনপ্রিয় রবীন্দ্রসংগীত শিল্পীর প্রয়াণ-দিন। তাঁকে শ্রদ্ধা জানানো ছাড়া আমার তো আর কিছু দেবার নেই ? তাই আমার নিজের স্মৃতিপটে সোনার অক্ষরে খোদাই করা কিছু স্বর্ণালি মুহূর্ত - যা তৈরী হয়েছিল পীযুষদাকে ঘিরে, এককভাবে তাঁরই সৌজন্যে, সেটুকু তুলে ধরবার চেষ্টা করছি গঙ্গাপুজোর অভিপ্রায়ে এই "মনে রেখো" কলমে। পীযুষদার সঙ্গে বহুবার বহু আসরে ও অন্যান্য অবসরে কোথাও না কোথাও দেখা হয়ে গিয়েছিল। শুধু গান নয়, তাঁর হৃদয়ের অনুভূতির প্রকাশ দেখেছি বেশ কয়েকবার। আমার বন্ধু নচিকেতা একদিন বলছিল, তাকে চায়ের দোকানে আড্ডা মারতে দেখে বাস থেকে লাফিয়ে নেমে পড়লেন পীযুষদা। টেনে নিয়ে গেলেন নিজের বাড়িতে, সটান গানের ঘরে। নচিকেতার ভূয়সী প্রশংসা বেরিয়ে এলো তাঁর মুখ থেকে আন্তরিক আবেগে, গানের ঘরে উপস্থিত প্রিয়জনের সামনে। গানের তুল্য-মূল্য বিচার-বিশ্লেষণও হলো এবং তারপরে একদিন যে এই নচিকেতা খুব নামি গায়ক হয়ে উঠবে, সেই দৃঢ় প্রত্যয়ে নিজেই এক অপূর্ব আনন্দে মশগুল হয়ে সকলের মাঝে নিজেকে খুঁজে পেয়ে একশিশুসুলভ দীপ্তিতে চোখে আলো জ্বলে ওঠা পীযুষদা নচিকেতাকে একান্ত আপন মেনে সকলকে বেঁধে ফেললেন সুরলোকের অমৃতরসে - যে বাঁধনে বিশ্বাস ও ভালবাসা যুক্তিতক্কের গন্ডি পেরিয়ে গানের ব্যাপারীর পায়েই প্রণতি জানায়।   

তিনি, মানে পীযুষদা এমনই এক চরিত্র ...... তাঁকে নিয়েই আমার আজকের লেখা ......... হয়তো 'এমন দিনে তারে বলা যায়' ..... তাই অতি সংকোচভরে একটি ঘটনার কথা বলছি। ......  

কলকাতার রবীন্দ্রসদন প্রেক্ষাগৃহে সারা-রাত্রিব্যাপী রবীন্দ্রসংগীতের অনুষ্ঠান হবে - আমি সুযোগ পেয়েছি নতুন শিল্পী হিসেবে একটি গান পরিবেশনের। কলকাতার মোটামুটি সব নামী ও প্রথিতযশা শিল্পীরাই ওই অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত - গান শোনাবেন। আমি যথারীতি নিজেকে লুকিয়ে মঞ্চের উল্টোদিকে বসে আছি। রবীন্দ্রসদনে পিছনের দরজা দিয়ে ঢুকে সাধারণত শিল্পীরা যেদিকটাতে বসেন, তার বিপরীতে। কখন ডাক পাবো জানি না - কারণ শিল্পী-তালিকা বেশ দীর্ঘ। বিখ্যাত শিল্পীদের মধ্যে যাঁরা প্রথম সারির, তাঁদের বসিয়ে রাখার ক্ষমতা অনুষ্ঠান সংগঠকদের কোনদিনই থাকে না, আর বেশির ভাগ ক্ষেত্রে শ্রোতারাও সেটা চান না। তাই একে একে বিখ্যাত সমস্ত শিল্পীর গানে গানে সেই সন্ধ্যা রাতের দিকে গড়িয়ে চলল সুরের আল্পনায় ছবি আঁকতে আঁকতে। রাত যখন মধ্যবর্তিনী, হঠাৎ আমার ডাক পড়ল। একবার বর্ষীয়ান স্বনামধন্য শিল্পী মান্না দে'কে বলতে শুনেছিলাম, 'অনুষ্ঠান থাকলে যতক্ষণ না সেটা শেষ হয়, মনের ভেতরকার অস্বস্তি কাটতে চায় না'। আর আজ আমার ক্ষেত্রে ঠিক উল্টো। এ রাত যে কখন কাটবে তা যেন বুঝেই উঠতে পারছি না। এতো আলোর মাঝে নিজেকে কোথায় লুকিয়ে রাখব ? প্রদীপ জ্বালিয়ে ও গান গেয়ে ওই অনুষ্ঠানের শুভ-সূচনা করেছেন সুচিত্রা মিত্র, সুমিত্রা সেন প্রমুখ। দুরু-দুরু বক্ষে উঠলাম মঞ্চে। বেশ মনে আছে, আমার অন্যতম প্রিয় একটি গান "যদি প্রেম দিলে না প্রাণে" গাইলাম। রামগোপাল পাইন বেহালা বাজিয়েছিলেন। শুকিয়ে কাঠ হয়ে যাওয়া গলায় সে গান কেমন হল, সে দিকে আমার কোন নজরই ছিল না। রামগোপালদা ইশারায় বললেন, 'ভাল'। সেটুকুকে প্রাপ্তি মেনে উঠতে যাব, হঠাৎ প্রেক্ষাগৃহের মধ্যে থেকে কেউ বললেন, 'আরো একটা গান শুনব'। সেদিকে কান দেবার প্রশ্নই নেই, কারণ আমি নিশ্চিত যে ভুল শুনছি। কিন্তু দাবি তীক্ষ্ণ হতে সংগঠকদের দিকে তাকালাম। তাঁদের কঠিন দৃষ্টি বুঝিয়ে দিল, আর এক মিনিটও দেরি নয়, অনেক হয়েছে। শ্রোতাদের কাছে ক্ষমা চেয়ে মঞ্চ থেকে নামতেই বুকের মধ্যে জড়িয়ে ধরলেন সেই পীযুষদা। ওনাকে আমি এপাশ থেকে লক্ষ্যই করিনি। রাগত স্বরে চেঁচিয়ে বললেন, শ্রোতা বড় না সংগঠক? এঁরা গানের কি বোঝেন? যেখানে শ্রোতা তোমার গান শুনতে চাইছেন, এ কত বড় প্রাপ্তি একজন শিল্পীর কাছে তা জানো? আমাকে কেউ একটু ভালো গেয়েছো বললে সারারাত ধরে গাইতে পারি। আর তুমি কিনা নেমে এলে?

আর হ্যাঁ, ওই তোমার গানে "দখিন হাওয়া"-র জায়গাটা অতটা বেশি সময় নিও না। মাথায় রাখবে আখরের কাজ বড় মসৃণ, চিকন-সুন্দর। তাকে অহেতুক অতিরঞ্জিত করে ভারী করতে নেই - সেক্ষেত্রে একটা monotony তৈরী হয়। আমার জীবনে এই ভালবাসার ঋণ কোনদিন শোধ হবার নয়। 

শিল্পীমাত্রই অভিমানী হন, পীযুষদাও ব্যতিক্রমী নন। তাঁর মনে এক চাপা অভিমান ছিল। আশির দশকের মধ্যভাগ থেকে মঞ্চে পীযুষদা সম্পূর্ণ ভিন্ন মানুষ - শ্রোতারা উত্তাল তাঁর রবীন্দ্রসংগীত শুনে। অনেকদিন পরে যেন সেই আবার জর্জদা, গভীর ব্যারিটোন ভয়েস - অন্য চেহারায় অন্য ড্রামা নিয়ে রবীন্দ্রসংগীতের আসরে অদ্বিতীয়। তবু আবার সেই একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি। জর্জদার মত এবারেও ভাগ হয়ে গেল শিল্পী-শ্রোতাদের ভালো আর মন্দে মেশানো সমালোচনা। নব্বই দশকের মাঝামাঝি সময়ে তাঁর কিছু গান বিশ্বভারতী অনুমোদন করলেন না। তবু পীযুষদাকে রোখা গেল না। তাঁর প্রথম রবীন্দ্রসংগীতের অ্যালবাম 'গোল্ড ডিস্ক' পেল - এক অনন্য সম্মান, এই জন্যে যে গানের বিষয় রবীন্দ্রসংগীত। পূর্বে বহুবার শোনা গান নতুনের কণ্ঠে, তা সত্ত্বেও এই বিপুল জনপ্রিয়তা - তাই এই প্রাপ্তি তাৎপর্যের। সুপারহিট হলো এর পরের আরো বেশ কয়েকটি রবীন্দ্রসংগীতের অ্যালবাম। সুর করলেন কিছু নতুন বাংলা গানে। পীযুষদা তৈরী করলেন রবীন্দ্রগানের এক উন্মুক্ত ঘরানা - সাধারণের ঘরে ঘরে স্থায়ী হল তাঁর নিজস্ব স্টাইল। মনে আছে, নব্বইয়ের দশকে অধিকাংশ জলসায় পীযুষদা ছিলেন Common Factor ।

তাঁর মনে গভীর বিশ্বাস ছিল যে শ্রোতারা তাঁর গান গ্রহণ করবেনই। তাই নিজের স্টাইল থেকে বেরিয়ে আসেন নি। একটু প্রবীণ বয়সেই তিনি জনমানসে ধরা দিয়েছিলেন, কিন্তু আঁকড়ে ধরবার আগেই মাত্র চৌষট্টি বছরে পীযুষদার কণ্ঠ স্তব্ধ হয়ে গেল। রয়ে গেল তাঁর ওই Intonation আর Articulation, যার কথা তিনি বারবার বলতে ভালবাসতেন, গায়কীর মধ্যে পুরে দিতে চাইতেন - সেই অননুকরণীয় গান গাইবার ভঙ্গিমার মধ্যেই রয়ে গেল তাঁর নীরব অহংকার - রেকর্ডে ধরে রাখা নানা ধারার রবীন্দ্রগানের আকুলতায়। 

বড় অসময়ে অদৃশ্যলোকের বাসিন্দা হয়ে যাওয়া সেই প্রায় ছ'ফুট উচ্চতার রুদ্রবীণা, যা খোলা মঞ্চে খোলা আওয়াজে পিনাকেতে লাগা টঙ্কার হয়ে বাজত, আজ যেন গান-ভালবাসা-মানুষের বুকের সুপ্তকোণে অভ্রভেদী অহঙ্কারের হাহাকার হয়ে বেজে ওঠে প্রায়শই - যখনই রবীন্দ্রগানে নিজের গায়কী প্রতিষ্ঠা করা কোন দৃপ্ত পুরুষ-কণ্ঠের অভাব অনুভূত হয়।

পীযুষদা, তুমি ফিরে আসতে পারো না ? ব্যর্থ প্রাণের আবর্জনা পুড়িয়ে ফেলে আগুন জ্বালতে যে তোমার মত কাউকে আজ বাংলা গানের আসরে বড় প্রয়োজন। 
©tapan basu. all rights reserved.
Picture Courtesy > indiatoday - saregamaindia 

Comments

Popular posts from this blog

তপনের ডায়েরি ৭ / ৩১ আগস্ট ২০২১

তপনের ডায়েরি ৫ / ৫ আগস্ট ২০২১

স্টেরয়েড ছোট গল্প রচনা : তপন বসু